ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

স্বাস্থ্যবিধি: গণপরিবহনে চালক-শ্রমিকরাই বেশি উদাসীন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:৪২ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০২২

দেশে হু হু করে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। বাড়ছে ভাইরাসটির নতুন ধরন ওমিক্রনের আধিপত্য। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের জায়গা ধীরে ধীরে দখলে নিচ্ছে ওমিক্রন। সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ১০ জানুয়ারি ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ১৩ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি নাজেহাল গণপরিবহনে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীরা। এর মূল কারণ, গণপরিবহনের চালক ও শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মানার ধারেকাছেও নেই।

সরকারের বিধিনিষেধে বলা হয়েছিল, ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।

কিন্তু বাস্তব চিত্র পুরোপুরি বিপরীত। করোনার ভয়াবহতায় এখন অধিকাংশ যাত্রী গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে বাড়তি সচেতনতা অবলম্বন করছেন। কিন্তু সেটা হয়তো কোনো কাজেই আসবে না, যতক্ষণ গণপরিবহনের চালক ও শ্রমিকরা সচেতন না হবেন।

buss1

রাজধানীর সব গণপরিবহনে চালক ও হেলপারের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার কথা বলা হলেও ১০ ভাগ ক্ষেত্রেও সেটি দেখা যাচ্ছে না। বরং মাস্ক না পরার প্রতিই তাদের উৎসাহ বেশি। বাসে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে না। সুযোগ পেলেই গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এ অবস্থা করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো ঘুরে এমন চিত্রেরই দেখা মিলেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশিভাগ বাস চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারের মুখে মাস্ক নেই। অফিস টাইমে কর্মজীবীরা লোকাল বাসে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে ছুটছেন। বাসের ভেতরে গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। একজনের নিশ্বাস পড়ছে আরেকজনের ওপর। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতেও দেখা যায়নি কোনো গণপরিবহনে। বাসের হেলপাররা পুরোনো অভ্যাসেই টেনে টেনে অতিরিক্ত যাত্রী তুলছেন। গা ঘেঁষেই চলছে ওঠানামা ও ভাড়া আদায়।

করোনা মোকাবিলায় সরকারের ১১ দফা নির্দেশনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রাখার কথা বলা হয়েছিল। পরে অবশ্য মালিকপক্ষের দাবির মুখে ‘যত সিট তত যাত্রী’ এ নিয়মে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত রোববার নতুন করে কিছু নির্দেশনা এলেও গণপরিবহনের বিষয়ে নতুন কোন নির্দেশনা আসেনি। ফলে পরিবহন শ্রমিকদের উদাসীনতা এবং যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়ে উপেক্ষিতই রয়ে গেলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার বিষয়টি।

buss1

এদিন সকালে শাহবাগে একটি বাসের চালক ও দুই সহযোগীকে মাস্ক না পরা অবস্থায় দেখা যায়। বাসটির চালক কামাল উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাস্ক পরলে নিশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। এখন পরিনি। পকেটে আছে।’

বাসের দুই সহযোগীর ভাষ্য- তারা মনের ভুলে মাস্ক বাসায় রেখে এসেছেন। সামনে গুলিস্থান মোড়, সেখানে গিয়ে কিছু মাস্ক কিনবেন।

অনেকে আবার মাস্ক ঠিকভাবে না পরে থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন। প্রয়োজন বুঝে তারা মাস্ক টেনে নাক-মুখের ওপরে তুলছেন। আবার সুযোগ বুঝে নামিয়েও ফেলছেন।

দেশে সংক্রমণ বাড়ার খবরে যাত্রীদের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা বহুগুণে বেড়েছে। তবে আসন সংখ্যার চেয়েও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করা অনেক সচেতন যাত্রীর পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না।

এসব বিষয়ে ইমন আহম্মেদ নামের এক যাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, আমি সচেতন হলেই কী লাভ, যদি অন্যরা সচেতন না হয়। বাসের সুপারভাইজার প্রত্যেকের নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে ভাড়া আদায় করছেন। কিন্তু উনার মুখেই মাস্ক নেই।

buss1

ফরিদ ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, বাসে সিট না থাকলে বাধ্য হয়েই দাঁড়িয়ে যেতে হয়। স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না কোনো বাসেই। স্বাস্থ্যবিধি মানার পরিস্থিতিও নেই। সরকার শুধু নির্দেশনা দিয়েই খালাস। আমরা যারা বাসে চলাচল করি তাদের কষ্ট আর স্বাস্থ্যঝুঁকির শেষ নেই। না পারি মানতে, না পারি সইতে।

সকালের দিকে রাস্তায় কর্মস্থলমুখী যে পরিমাণ যাত্রী থাকে গণপরিবহনের সংখ্যা থাকে তারও কম। ফলে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হয় প্রায় প্রতিটি বাসে। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে দৌড়ানোর পাল্লায় যাত্রীরাও ঝুঁকি নিয়েই বাধ্য হয়ে উঠে পড়েন সেসব বাসে।

সিট না পেয়ে রামপুরা থেকে পল্টন পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আসা যাত্রী ফজলে হুদা জাগো নিউজকে বলেন, অফিসে তো সময় মতো যেতে হবে। কয়েকটা বাস মিস করেছি। এখন না গেলে দেরি হয়ে যাবে। বেতন কাটবে।

ওই বাসেরই হেলপার সুমন বলেন, যাত্রীরা জোর করে ওঠে। যাদের মাস্ক নেই বললেও তারা মাস্ক পরতে চায় না। আবার অনেকে আছেন তাদের বলতে হয়। তারা খুব সচেতন। সঠিকভাবে মাস্ক পরেন।

এনএইচ/এমকেআর/এমএস