ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

২৯ মাসেও খুন হওয়া ব্যক্তি অজ্ঞাত, শনাক্ত হলো আসামি

মিজানুর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | প্রকাশিত: ০১:৪২ এএম, ০৮ জানুয়ারি ২০২২

দীর্ঘ ২৯ মাসেও পরিচয় শনাক্ত হয়নি রাঙ্গামাটির কোতোয়ালি থানার কল্যাণপুর এলাকার একটি ডোবা থেকে উদ্ধার হওয়া ৩৮ বছর বয়সী অজ্ঞাত মরদেহের। তবে এর মধ্যে সম্প্রতি অজ্ঞাত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন আসামিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সংস্থাটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট এবং সেনাবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামি লাট্রুস চাকমা ওরফে এনজয় চাকমাকে (২২) গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) রাঙ্গামাটির লংগদু থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এনজয় চাকমার বাড়ি লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। তার বাবার না শান্তিময় চাকমা।

পিবিআই জানায়, শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) এনজয় চাকমাকে রাঙ্গামাটির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামশেদ আলমের আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে এনজয় চাকমা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন এবং ঘটনার আদ্যোপান্ত খুলে বলেন। এ ঘটনায় তার সঙ্গে আরও দুই ব্যক্তি জড়িত বলে আদালতের জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন এনজয়। একই জবানবন্দিতে তিনি বাকি দুই আসামির নাম-পরিচয় উল্লেখ করে বিস্তারিত জানান। বর্তমানে পিবিআই ওই দুই আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করছে।

এনজয় চাকমার দেওয়া জবানবন্দি সূত্রে পিবিআই জানায়, নিহত ব্যক্তি কোতোয়ালি থানার কল্যাণপুর এলাকার বাজারে ফলের ব্যবসা করতেন। ভাসমান অবস্থায় দোকান করে তিনি ভাসমান অবস্থায় ঘুমাতেন। গ্রেফতার আসামি একই এলাকায় ফার্নিচারের দোকানে চাকরি করতেন। তার আরেক সহকর্মীসহ নিহত ব্যক্তিকে তাদের সঙ্গে প্রতি রাতে থাকার প্রস্তাব দেন।

কথা মোতাবেক একদিন ফল ব্যবসায়ী এনজয় চাকমাদের সঙ্গে থাকতে জন্য আসেন। ওইদিন ব্যবসায়ীর জন্য রাতের খাবার আনেন অভিযুক্তরা। খাবার আনতে আসামিদের ১০০ টাকা দেন ব্যবসায়ী। দোকান থেকে আসামিরা খাবার এনে ব্যবসায়ীকে অবশিষ্ট ৪০ টাকা ফেরত দেন। কিন্তু ব্যবসায়ী ওই ৪০ টাকা না নিয়ে আসামিদের নাস্তা করার জন্য দিয়ে দেন।

এদিকে রাতের খাবার শেষে অভিযুক্তরা ব্যবসায়ীকে চোলাই মদ পান করান। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীর কাছে বেশ কিছু টাকা দেখতে পান অভিযুক্তরা। এরপর বাইরে বের হয়ে ব্যবসায়ীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন তারা। রাতে ব্যবসায়ী ঘুমিয়ে গেলে অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করে পার্শ্ববর্তী একটি ডোবায় ফেলে দেন। এরপর তার কাছ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা নিয়ে ঘটনার পরদিন সকালে আসামিরা পালিয়ে যান।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট রাঙ্গামাটির কোতোয়ালী থানার কল্যাণপুর পেট্রল পাম্প এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বোর্ড অফিসের পেছনের মাঝামাঝি ডোবার মধ্য থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আনুমানিক ৩৮ বছর বয়সী ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অংশ হাতুড়ি দ্বারা থেঁতলানো ও ধারালো অস্ত্র দ্বারা জখম অবস্থায় ছিল।

তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ওই যুবকের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) আল আমিন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কোতোয়ালি থানা পুলিশ মামলাটির কোনো কুল-কিনারা করতে না পাওয়ায় আদালত পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট মামলাটি তদন্ত শুরু করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের পরিদর্শক মো. আবু হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, আসামিরা প্রথমে মনে করছিল, ব্যবসায়ীর কাছে অনেক টাকা আছে। তাই তারা হত্যার পরিকল্পনা করে। কিন্তু পরে তারা দেখতে পায় ব্যবসায়ীর কাছে মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা আছে। টাকাগুলো তিনজনে ভাগ করে নিয়ে ঘটনার পরের দিন সকালে আসামিরা একটি বোট নিয়ে পালিয়ে যায়। দীর্ঘদিন নিহত ব্যক্তি এবং আসামিরা অজ্ঞাত ছিল। এখন সোর্স ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এখনো নিহত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার পরিচয় শনাক্তে তদন্ত করা হচ্ছে।

পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) ও মামলার তদারকি কর্মকর্তা নাজমুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, দুর্গম এলাকায় গা ঢাকা দেওয়ার মাধ্যমে আসামিরা মনে করেছিল মামলার দায় থেকে বাঁচতে পারবে। কিন্তু পিবিআই আসামিদের শনাক্তে লেগে থাকে। একপর্যায়ে শনাক্ত হয় আসামি। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকি দুই আসামি শনাক্ত হয়েছে। তাদের শিগগির গ্রেফতার করা হবে।

এমআরআর