দিনে মাদকসেবীদের আড্ডা, রাতে যৌনকর্মীদের দখলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
রাজধানীর ঐতিহাসিক শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দিনভর চলে মাদকসেবীদের আড্ডা। রাত হলেই যৌনকর্মীদের দখলে থাকে উদ্যানটি। একই সঙ্গে সবুজ বৃক্ষরাজি ও বর্ণিল ফুলে শোভিত উদ্যানটি এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে নষ্ট হচ্ছে দেশের অন্যতম কেপিআই অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটির স্বাভাবিক পরিবেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথের অদূরে তিন দশকের পুরনো ‘বৃক্ষ মায়া’ নামে প্রাতঃভ্রমণকারীদের একটি সংগঠন রয়েছে। সংগঠনটির উদ্যোগে কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ সামগ্রী সেখানে রাখা হয়েছে। বিশ্রামের জন্য একটি শেড ও ইট-পাথর ঢালাই করা কয়েকটি বসার বেঞ্চও করেছে তারা।
সংগঠনের সদস্যরা বলছেন, প্রতিদিন ভোরে রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নারী-পুরুষ ও শিশুরা সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাঁটতে আসেন। সেখানে অনেকে শরীরচর্চা করেন। তবে উদ্যানের নিরাপত্তায় দায়িত্বরতদের অবহেলায় ঐতিহাসিক এ জায়গাটি এখন মাদকসেবী ও যৌনকর্মীদের দখলে চলে গেছে। হাঁটতে এসে অনেকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।
আজ শনিবার ভোরে উদ্যানে সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘বৃক্ষমায়া’-এর শেডের নিচে নির্মিত বেঞ্চগুলোর একটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে ভাঙা অংশ। বিষয়টি নিয়ে প্রাতঃভ্রমণকারীরা তীব্র ক্ষোভ জানান।
‘বৃক্ষমায়া’-এর নেতারা জানান, সূর্যাস্তের পর এই উদ্যানে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে কে বা কারা বৃক্ষমায়া-এর শেডের নিচে থাকা বেঞ্চটি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে।
বৃক্ষমায়া-এর সঙ্গে প্রায় তিন দশক ধরে জড়িত মুহাম্মদ রুমি। তিনি জানান, সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক বৃক্ষমায়া সংগঠনটি নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণকারী ও শরীরচর্চা করার একটি প্ল্যাটফর্ম। এ সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের পকেটের টাকায় শরীরচর্চা সামগ্রী ও বিশ্রাম নেওয়ার জন্য শেড এবং বেঞ্চগুলো নির্মাণ করেছেন।
মুহাম্মদ রুমি বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বৃহস্পতিবার রাতে একদল মাতাল যুবক বেঞ্চটি ভেঙে ফেলেছেন। আগে উদ্যানের পরিবেশ ভালো থাকলেও ইদানিং দিন ও রাত উভয় সময়ে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রম হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে দিনে-দুপুরে উদ্যানে মাদকসেবীদের অবাধ আড্ডা, উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের অসামাজিক কর্মকাণ্ড এবং রাতে যৌনকর্মীদের অবাধ বিচরণ এখন ওপেন সিক্রেট।’
উদ্যানের নিরাপত্তা রক্ষায় আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকলেও তারা দায়িত্ব পালনের তৎপর নন। উল্টো আনসার সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে উদ্যানে মাদকদ্রব্যের কেনাবেচা জমজমাট বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কয়েক বছর ধরে চলছে উন্নয়ন কার্যক্রম। উদ্যানের আশপাশে নির্মিত হচ্ছে ডজনখানেক রেস্টুরেন্ট। হাঁটা-চলার জন্য ওয়াকওয়ে নির্মিত হচ্ছে। ফলে নির্মাণসামগ্রী বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তার বাইরে উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কলেজশিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার দুই সহপাঠীকে নিয়ে বিকেলে উদ্যানের লেকপাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। এসময় কয়েকজন যুবক আমাদেরকে বাজে কথা বলতে শুরু করেন। উদ্যানে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে সাহায্য চাইলে উল্টো তারা বখাটেদের পক্ষ নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে আনসার সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, তারা কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কে দায়িত্ব পালন করেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেদিকে খেয়াল রাখেন। তবে বৃক্ষমায়ার শেডের নিচের বেঞ্চ ভেঙে ফেলার বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেননি।
এমইউ/এএএইচ/এমএস