ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বিদায় ২০১৫

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১২:৩৬ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫

সংঘর্ষ আর অনিশ্চয়তায় বছরের শুরু। রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্য দিয়েই শেষ। নতুনের কেতন উড়িয়ে আসছে আরো একটি ইংরেজি নববর্ষ। বিদায় ২০১৫। বিদায় বেদনার পাশাপাশি জরা, গ্লানি আর হিংসার আবরণ ভেদ করে নতুন বছর হাতছানি দিচ্ছে সংহতি আর সম্ভবনার। অনিশ্চয়তা দূর করে ঐক্যের বন্ধনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যায় নিয়ে নববর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত দেশবাসী।

রাজনৈতিক হিংসার বছর ২০১৫। বছরের শুরুতে এক অনিশ্চয়তায় যাত্রা বাংলাদেশের। সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে বিরোধীজোট সংঘাতের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। পেট্রলবোমা, অগ্নিসংযোগে পুড়তে থাকে গোটা দেশ। অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায় পেট্রলবোমার আগুনে। হতাহতের আর্তনাদে মানবতা যেন প্রায় বিপন্ন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট হয়ে ওঠে এক জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড।

অপরদিকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকারের পক্ষ থেকে শক্তি প্রয়োগেও কোনো কমতি ছিল না। উপর্যুপরি শক্তি প্রয়োগে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হারাতে থাকে। প্রাকাশ্যে মিছিল, মিটিংসহ সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর এক অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। বিরোধীজোটের আন্দোলন দমাতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতেও ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। সরকারের মারমুখি অবস্থানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বিরোধীজোটের আন্দোলন।

এমন রাজনীনৈতিক সহিংসতার মধ্যেই সরকার আয়োজন করে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের। প্রায় এক দশক পর ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল ২০১৫ সালের একটি বড় রাজনৈতিক ঘটনা। বিরোধীজোট প্রহসনের নির্বাচন বললেও এর মধ্য দিয়ে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বিশেষ গতি পেয়েছে বলে মনে করা হয়।

২০১৫ সালের হিংসার আরেকটি থাবা ছিল বিদেশিদের ওপর হামলা। দেশে বসবাসরত দুই ইতালিয়ান এবং জাপানিজ নাগরিককে হত্যার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে নেতিবাচকভাবে উপস্থানের চেষ্টা চলে। এই ঘটনায় পশ্চিমাবিশ্ব বাংলাদেশ সফরের ওপর সতর্কতা অবলম্বন করে, যা সরকারকে রীতিমত বিব্রতও করে।

এই দুটি হত্যাকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিল, পুলিশ এবং ব্লগার-প্রকাশকদের ওপর পরপর হামলার ঘটনা ঘটে, যা সর্বমহলে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। সরকার এসব হত্যাকাণ্ডের বিরোধী পক্ষের ওপর দায় চাপালেও পরে প্রাথমিক তদন্তে নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবি’র সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়।

একইভাবে সম্প্রতি রাজশাহী এবং বগুড়ায় মসজিদে বোমা হামলার ঘটনাও জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। সরকার জঙ্গি দমনে নানা সফলতার কথা বললেও বছরব্যাপী হামলা, হত্যা, গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধারের মতো ঘটনাগুলো আবারো জঙ্গি আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বমহলে।

Year


রাজনৈতিক এবং সামাজিক অস্থিরতার মধ্যেই বছর শেষে পৌর নির্বাচন ছিল একটি আলোচিত ঘটনা। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের জনপ্রিয়তা যাছাই করার সুযোগ পায়, যদিও নানা অনিয়ম-অভিযোগের ভিত্তিতে বিরোধীজোট পৌর নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

বছরের আলোচিত বিষয় ছিল যুদ্ধাপরাধের রায় কার্যকর। বিশেষ করে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার বিষয় ছিল। এই দুই জনের মৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েনও সৃষ্টি হয়।

এদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয়া ছিল বছরের উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা। নিরাপত্তার অজুহাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয় এমনটি দাবি করা হলেও সরকারকে এর জন্য ব্যাপক সমালোচনায় পড়তে হয়।

শিশু রাজন এবং রাকিব হত্যার মতো নির্মম ঘটনাগুলোও এ বছর মানুষের মনে বড় দাগ কাটে। গর্তে পড়ে শিশু জিহাদ আর নিরবের মৃত্যুও ভোলার মতো নয়।

এ বছর উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার ঘটনা ছিল উপমহাদেশের অন্যতম একটি বন্দি বিনিময়ের ঘটনা।   

সংঘাত আর অস্থিরতা থাকলেও ২০১৫ সাল ছিল অর্জনের বছর। এ বছরেই দীর্ঘ সাড়ে ছয় দশকের জট কাটিয়ে সীমান্ত চুক্তির বাস্তায়ন হয়। শিক্ষা, সাস্থ্য, খাদ্য, আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সেক্টরে সরকারের সাফল্য ছিল প্রশংসনীয়।

পদ্মাসেতুর মূল কাজের উদ্ধোধন করে সরকার গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় এ বছরেই। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় গতি আনায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়কের কাজ চলতি বছরেই বিশেষ গতি পেয়েছে। মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি মেট্ররেলের ব্যাপারেও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ২০১৫ সালেই। অনিশ্চয়তার আঁধার কাটিয়ে উন্নয়ন আর সম্ভবনার বার্তা নিয়ে আসছে ২০১৬। নতুন বছর হিংসার বেড়া ডিঙ্গিয়ে সকলের জীবনে বয়ে আনুক সুন্দর আর ভালোবাসার আলো।

এএসএস/এসএইচএস/পিআর