ব্লগার রাজীব হত্যা মামলায় ২ জনের ফাঁসি
ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক আহমেদ রাজিব হায়দার হত্যা মামলায় দুই জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এটি প্রথম কোন ব্লগার হত্যা মামলার রায়।
বৃহস্পতিবার ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদ এই রায় ঘোষণা করেন।ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দ্বীপ ও রেদোয়ানুল আজাদ রানা।
উল্লেখ্য, রাজধানীর শাহবাগে ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে। এ ঘটনায় রাজীবের বাবা নাজিম উদ্দীন পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেন। ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে।
গত বছরের ২৮ জানুয়ারি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানীসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।
মামলায় অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- ঢাকার খিলক্ষেত চৌধুরীপাড়ার মো. ফয়সাল বিন নাঈম দীপ (২২), ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার পোড়াপাড়া গ্রামের মো. এহসান রেজা রুম্মান (২৩), ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থানার ধলেশ্বর গ্রামের মাকসুদুল হাসান অনিক (২৩), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কলেজপাড়ার নাঈম ইরাদ (১৯), চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার হারামিয়া গ্রামের নাফিজ ইমতিয়াজ (২২), ঢাকার কলাবাগান থানার ভুতের গলির সাদমান ইয়াছির মাহমুদ (২০) ও ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার জয়লস্করের রেদোয়ানুল আজাদ রানা (৩০)। এদের মধ্যে রেদোয়ানুল আজাদ রানা ছাড়া সবাই কারাগারে আছেন।
জসীমউদ্দিন রাহমানি ছাড়া সবাই নর্থ সাউথের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। পলাতক রানাকে রাজীব হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, জসীমউদ্দিন রাহমানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুমার খুতবায় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে এমন ব্লগারদের হত্যার ফতোয়া দিতেন। জসীমউদ্দিনের লেখা বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবা শুনে বাকি আসামিরা ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন। রাহমানকে ওই হত্যাকাণ্ডে উৎসাহদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পেশায় স্থপতি রাজীব ‘থাবা বাবা’ নামে ব্লগ লিখতেন। এতে ধর্মান্ধতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারীদের বিপক্ষে লিখতেন তিনি।
মুফতি মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন রাহমানিকে ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে একই বছরের ২০ আগস্ট ও বাকিদের ১০ মার্চ গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
গ্রেফতার হওয়ার পর ২০১৩ সালের ১০ মার্চ রাজীব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ৫ ছাত্র ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, এহসান রেজা রুম্মান, মাকসুদুল হাসান অনিক, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজ ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
এআরএস/আরআইপি