ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

যেভাবে মসজিদ থেকে নিয়ে মণ্ডপে কোরআন রাখেন ইকবাল

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:৫২ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২১

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় ১৬ মিনিটের একটি পূর্ণাঙ্গ সিসিটিভি ফুটেজ জাগো নিউজের হাতে এসেছে। অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন কীভাবে, কখন মসজিদে যান, বের হন, মণ্ডপের দিকে যান এবং মণ্ডপ থেকে গদা হাতে ফেরেন তা ফুটেজে অনেকটা স্পষ্ট। মসজিদের পাশের পুকুর পাড়ের একটি বাড়ির উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি, মসজিদের একটি ও বাজার, ব্যাংক, সড়কের কয়েকটি স্পটের ফুটেজে ওই ব্যক্তিকে প্রথমে কোরআন হাতে এবং পরে গদা হাতে দেখা গেছে।

বুধবার মসজিদ থেকে কোরআন হাতে নিয়ে বের হওয়ার একটি ফুটেজ ও মন্দির থেকে গদা হাতে নিয়ে ঘোরাঘুরির আরেকটি ফুটেজ জাগো নিউজের হাতে আসে। বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে ১৬ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের আরেকটি পূর্ণাঙ্গ সিসিটিভি ফুটেজ। ফুটেজটি ১২টি সিসিটিভি ক্যামেরার পূর্ণাঙ্গ চিত্র।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিজ্ঞ টিম দীর্ঘক্ষণ ফুটেজগুলো অ্যানালাইসিস করেছে বলেও একটি সূত্রে জানা যায়।

যেভাবে মসজিদ থেকে নিয়ে মণ্ডপে কোরআন রাখেন ইকবাল

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১২ অক্টোবর রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে মসজিদে প্রবেশ করতে দেখা যায় মাজারের খাদেম ফয়সাল ও হাফেজ হুমায়ুনকে। এরপর রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে মসজিদে প্রবেশ করেন ইকবাল। এসময় খাদেম ফয়সাল ও হাফেজ হুমায়ুন ইকবালের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায়। ঠিক রাত ১১টায় তারা তিনজনই সেখান থেকে বেরিয়ে যান।

এরপর ১২ অক্টোবর দিনগত রাত ২টা ১২ মিনিটের দিকে পুনরায় মসজিদে প্রবেশ করে কোরআন নিতে দেখা যায় ইকবালকে। এসময় পাশেই অজ্ঞাতপরিচয় একজন ঘুমিয়ে ছিলেন, আরেকজন ছিলেন নামাজরত অবস্থায়। এর দুই মিনিট পর মেঝেতে কোরআন রেখে তাকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপর রাত ২টা ১৮ মিনিটে মসজিদে আবারও প্রবেশ করে মেঝেতে রাখা কোরআন নিয়ে মসজিদ থেকে বের হতে দেখা যায় তাকে। এরপর মসজিদ থেকে বের হয়ে তাকে মূল সড়কে উঠে মন্দিরের দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়।

আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ইকবাল পূজামণ্ডপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। পূজামণ্ডপের রোড থেকে জগন্নাথ মন্দির রোডের দিকে এগিয়ে যান। এরপর তিনি জগন্নাথ মন্দির রোড থেকে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক চকবাজার শাখার দিকে এগিয়ে যান। পূবালী ব্যাংক মোড়ের পাশের গলিতে প্রবেশ করেন তিনি। সেখানে অবস্থান করে নৈশপ্রহরীদের সঙ্গে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। সর্বক্ষণই তার হাতে কোরআন দেখা যাচ্ছিল। কথাবার্তার পরে তাকে জগন্নাথ মন্দিরের দিকে যেতে দেখা যায়। সেই রোডে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর পূজামণ্ডপের দিকে এগিয়ে যান ইকবাল।

যেভাবে মসজিদ থেকে নিয়ে মণ্ডপে কোরআন রাখেন ইকবাল

আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৩টা ১২ মিনিটে যুবকটির হাতে কোরআন শরিফ নেই। তিনি এসময় গদা কাঁধে নিয়ে মন্দিরের পাশে পুকুরপাড়ের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এসময় তিনি চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলেন কেউ তাকে দেখছে কি না।

চিহ্নিত ব্যক্তির প্রস্থানের একটু পরে রাত ৩টা ১৩ মিনিটের দিকে ৯৯৯ এ কল দেওয়া একরামকে সেখানে দেখা যায়। এরপর তাকে আবার ৩টা ২৩ মিনিটের দিকে দারোগাবাড়ি মসজিদে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এসময় তার কাছে কোরআন কিংবা গদা কিছুই দেখা যায়নি।

এরপর ১৩ অক্টোবর পুকুরপাড়ে উত্তেজিত জনতার সামনে তাকে কথা বলতে দেখা যায়।

যেভাবে মসজিদ থেকে নিয়ে মণ্ডপে কোরআন রাখেন ইকবাল

এদিকে, বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখা ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হওয়া ইকবাল হোসেন মোবাইল ব্যবহার করছেন না। তাকে খুঁজে বের করার সর্বোচ্চ চেষ্টা নিয়েছি। আমি আগেই বলেছি আমরা সুনিশ্চিত, যে লোকটি করেছে, আমাদের ক্যামেরার মাধ্যমে তাকে আমরা চিহ্নিত করেছি। যে মাজারের সঙ্গে মসজিদ, ওটা খুব প্রসিদ্ধ মসজিদ। দেখা গেছে সেই মসজিদে রাত ৩টার দিকে তিনি গেছেন। একবার নয়, তিনবার।

তিনি বলেন, সেখানে অবস্থান করে মসজিদের দুজন খাদেম ছিলেন, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছে। আমাদের অভিজ্ঞ টিম দীর্ঘক্ষণ এটা অ্যানালাইসিস করে সুনিশ্চিত হয়েছে। এই ব্যক্তিটি (ইকবাল) মসজিদ থেকে কোরআন এনে রেখেছেন, সেটা তারই কর্ম। রেখে তিনি মূর্তির গদাটি কাঁধে করে নিয়ে এসেছেন, সেই দৃশ্যটিও আপনারা দেখেছেন।

যেভাবে মসজিদ থেকে নিয়ে মণ্ডপে কোরআন রাখেন ইকবাল

গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা মহানগরীর নানুয়া দিঘিরপাড় পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা নিয়ে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিভিন্ন থানায় আট মামলায় ৭৯১ জনকে আসামি করা হয়ে। এর মধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঁচটি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুটি ও দাউদকান্দি থানায় একটি মামলা হয়েছে। ৯১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলায় ৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

কুমিল্লার ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় উপাসনালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। চাঁদপুরে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।

টিটি/এএএম/এএ/জেআইএম