ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সোহেল রানাকে ফেরত চেয়ে ৩ দফায় চিঠি দিলেও সাড়া মেলেনি ভারতের

তৌহিদুজ্জামান তন্ময় | প্রকাশিত: ১০:০৯ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার সাময়িক বরখাস্ত পরিদর্শক (তদন্ত) ও প্রতারণা মামলার আসামি সোহেল রানাকে ফেরত চেয়ে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে তিন দফায় চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি পুলিশ সদর দপ্তর। সেজন্য এই আসামিকে দেশে ফেরানোর বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে তারা। মনে করা হচ্ছে, এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কূটনৈতিক উপায়ে সোহেল রানাকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে সরকার।

সোহেল রানা গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে প্রতারণার একাধিক মামলার আসামি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বনানী থানার বরখাস্ত এ কর্মকর্তার বোন সোনিয়া মেহজাবিন ও ভগ্নিপতি মাসুকুর রহমান ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ পরিচালনা করছিলেন।

গত ১৭ আগস্ট অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতারণার শিকার গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। ওই সময় তার সঙ্গে প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন। গ্রাহকের ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয় মামলায়।

মামলায় ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমানের পাশাপাশি বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানাকেও আসামি করা হয়। আসামি করা হয় আমানউল্ল্যাহ, বিথী আক্তার ওকাউসার আহমেদ নামে আরও তিনজনকে।

কিন্তু শুরু থেকেই ই-অরেঞ্জের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন সোহেল রানা। পরে ই-অরেঞ্জ বাংলাদেশ নামে প্রতিষ্ঠান খুলতে নেওয়া টিআইএন সনদে পরিচালক হিসেবে সোহেল রানার নাম দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিভিন্ন সময়ে আড়াই কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে।

এর মধ্যে গত ৩ সেপ্টেম্বর নেপালে পালিয়ে যেতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্দায় চলে যান সোহেল রানা। তখন ওই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়েন তিনি। পরদিন ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়।

ভারতে আটক হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা অপরাধমূলক একাধিক কাজে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্বীকার করেন বলে জানান বিএসএফের কর্মকর্তারা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলেছে, সম্ভবত গা ঢাকা দেওয়ার লক্ষ্যে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন সোহেল রানা।

jagonews24

যদিও সোহেল রানাকে প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার দেখানোর অনুমতি চেয়ে ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের কাছে আবেদন করেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান। তবে এর আগেই তার পালিয়ে যাওয়ার খবর জানা গেলে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় সোহেল রানাকে ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সাময়িক বরখাস্ত সোহেল রানাকে দেশে ফেরাতে ভারত সরকারের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) পরপর তিন দফা চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তর। বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি শাখা থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম এবং গত ৭ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় অতিরিক্ত তথ্য সংযুক্ত করে চিঠি পাঠানো হয় দিল্লির এনসিবিতে। দুই দফার চিঠির উত্তর না পাওয়ায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দফায় চিঠি পাঠায় পুলিশ সদরদপ্তর। তবে এ চিঠি পাঠানোর ১০ দিন পেরোলেও দিল্লির পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি। ভারতের সাড়া না পাওয়ায় পুলিশ সদর দপ্তর এখন বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ভারতে আটক সোহেল রানাকে ফেরত চেয়ে দিল্লি এনসিবিকে দুই দফায় পাঠানো চিঠির সাড়া না পেয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় দফায় চিঠি দিয়েও ভারতের সাড়া না পাওয়ায় বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়তো এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফরওয়ার্ড করবে।

ই-অরেঞ্জের ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে সিআইডি
ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ১১০০ কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাতের অভিযোগে মামলার পর তা অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই ১১০০ কোটি টাকা ই-অরেঞ্জ কী করেছে তা জানতে চলছে এ অনুসন্ধান।

সিআইডির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এ মামলার আসামিসহ বেশ কয়েকজনের তথ্য ও ব্যাংক হিসাব দেখা হচ্ছে। ই-অরেঞ্জ বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে কি না তা-ও তদন্ত করা হচ্ছে।

সূত্রে জানা গেছে, ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হলেও সিআইডি মানি লন্ডারিং হয়েছে কি না সে বিষয়টিও অনুসন্ধান করছে। পাশাপাশি তারা কী কারণে, কেন হঠাৎ করে (১ জুলাই) মালিকানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিল ওই বিষয়েও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া অনুসন্ধানে তাদের মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলা করবে সিআইডি। মামলার তদন্তভার সিআইডিতে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে।

টিটি/এইচএ/জিকেএস