দ্বিতীয় দিনেও সার্ভার সমস্যা, টিকা ছাড়াই ফিরছে মানুষ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে দ্বিতীয় দিনের মতো গণটিকা কার্যক্রম চলছে। তবে এদিনও সার্ভার সমস্যার কারণে টিকা প্রত্যাশীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ালেও এ জটিলতার কারণে টিকা ছাড়াই কেউ কেউ ফিরে গেছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মিরপুর ২, মনিপুর ও আহমেদ নগরের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। টিকা দিতে মানুষের লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। যারা নিবন্ধন করেও টিকা পাননি তাদের ও ষাটোর্ধ বয়সীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের টিকা কার্ড আনতে হচ্ছে। আর বয়স্করা কেবল জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে টিকা পাচ্ছেন। তবে সার্ভার জটিলতার কারণে কারও তথ্য যাচাই করতে গিয়ে না মিললে নতুন করে নিবন্ধন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই টিকা ছাড়াই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে অনেককে।
পীরেরবাগের বাসিন্দা সোহান এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টিকাকেন্দ্রে প্রবেশ করলেও কার্ড স্ক্যান করে তথ্য না মেলায় তাকে টিকা ছাড়া বাড়ি ফিরতে হয়েছে। ভেতরে অনেক চেষ্টা করেও তার তথ্য মেলানো সম্ভব হয়নি।
কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, নিবন্ধন কার্ড না মেলায় আমাকে টিকা দেওয়া হয়নি। তাদের সার্ভার সমস্যার কারণে নতুন করে নিবন্ধনও করা যাচ্ছে না। এ কারণে টিকা পেলাম না।
তিনি বলেন, আজকে টিকা নেবো বলে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। সকাল সকাল টিকাকেন্দ্রে এসে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ভেতরে প্রবেশ করলেও টিকা পেলাম না। অপেক্ষা করিয়ে এক ধরনের হয়রানি করা হচ্ছে। আর ভবিষ্যতে তাকে টিকা দেওয়া হবে কিনা তা অনিশ্চিত বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
মনিপুরের বাসিন্দা আরিফা ইসলাম ও তার মেয়ে শিল্পা সুলতানা গত দেড় মাস আগে একইদিন টিকার জন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করলেও এসএমএস পাননি। এ জন্য ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে গণটিকার লাইনে দাঁড়িয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে আরিফা জাগো নিউজকে বলেন, দেড় মাস আগে রেজিস্ট্রেশন করেও টিকার এসএমএস পাইনি। এ জন্য আজ আমি ও আমার মেয়ে টিকা নিতে এসেছি। টিকা নিতে এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। রাস্তার উপর মানুষের লাইন তৈরি হওয়ায় গাদাগাদি করে দাঁড়াতে হচ্ছে।
৫৬ বছর বয়সী মনিপুরের বাসিন্দা মো. সেলিম মিয়া লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এক মাস আগে নিবন্ধন করেছি, এসএমএস পাইনি বলে গণটিকার লাইনে দাঁড়িয়েছি। ৩০ মিনিট ধরে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। রাস্তায় দাঁড়ানোর জায়গা কম থাকায় বাধ্য হয়ে ভিড় করে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে মিরপুর-১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসমাইল মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে দ্বিতীয় দিনের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই মানুষের ভিড় তৈরি হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বারবার মাইকিং করে সর্তক করা হলেও মানুষ কথা শুনছেন ন। এ কারণে বাধ্য হয়ে তাদের ধমক দিয়ে সরাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষের উপস্থিতি খুব বেশি হচ্ছে না। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৮০ জনকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আজ বুধবার ২৫০ জনকে দেওয়া হতে পারে। এক হাজার টিকা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এই কাউন্সিলর আরও বলেন, কারও টিকা নিবন্ধন কার্ডের সঙ্গে সার্ভারে তথ্য না মিললে নতুন করে নিবন্ধন করে টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু সার্ভার সমস্যার কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। দুপুর আড়াইটায় টিকা কার্যক্রম শুরু হলেও সার্ভার সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে নতুন নিবন্ধন করে কাউকে টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বা টিকা কার্ডের সঙ্গে সার্ভারে তথ্য না মিললে টিকা ছাড়া তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে। মানুষের ভোগান্তি কমাতে দ্রুত সার্ভার সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে সারাদেশে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় ৭৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে।
এমএইচএম/এমআরআর/এএসএম