ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

রাশিয়ার মতো ভালো ভোট এই মুহূর্তে দেশে সম্ভব নয়: সিইসি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:২৬ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য সম্প্রতি রাশিয়া ঘুরে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, রাশিয়ার মতো ভালো ভোট এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সম্ভব নয়। রাশিয়ায় ব্যালটে ভোট হলেও ভোটিং ব্যবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে উন্নত।

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রাশিয়ার ভোট নিয়ে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন সিইসি। তিনি ১৬ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। ১৭ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার ভোট পর্যবেক্ষণ করেন। ২১ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন।

কে এম নূরুল হুদা বলেন, রাশিয়ার নির্বাচন ব্যবস্থা ভালো। আমাদের থেকে তাদের পার্থক্য হলো- সেখানে আমাদের মতো রাস্তাঘাটে ব্যানার ফেস্টুন বা দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার নেই। নির্বাচন কেন্দ্রের বাইরে আমাদের এখানে প্রার্থী বা তার সমর্থকরা প্রচারণা চালান, রাশিয়ায় সেই সুযোগ নেই। সেটা করা হয় না। সেখানে নির্বাচন নিয়ে প্রচার-প্রচারণা মূলত অনলাইনভিত্তিক বেশি হয়। ডিজিটাল সিস্টেম অত্যন্ত উঁচুমানের। আমাদের দেশে কর্মীরা যেমন ঘরে ঘরে ভোটারদের কাছে যায়, অথবা লিফলেট দেয়- এই জাতীয় কালচার সেখানে দেখিনি, ওখানে নেই।

রাশিয়ায় ভোটিং ব্যবস্থাপনাটি ডিজিটালাইজড

তিনি বলেন, রাশিয়া ভোটিং ব্যবস্থাপনাটি ডিজিটালাইজ করে ফেলেছে। তাদের প্রায় ৯৮ হাজার লোকেশন। এই সবগুলো কেন্দ্র তারা সিসিটিভির আওতায় নিয়ে এসেছে। তারা কেন্দ্রীয়ভাবে সব দেখতে পারে। বড় হলঘরের চারপাশের দেয়ালে টানানো আছে সিসিটিভির স্ক্রিন। কোন এলাকায় কখন কী ঘটে সবগুলোর তারা দেখতে পারে। প্রত্যেকটার সঙ্গে তাদের লিঙ্ক আছে। কত ভোট কাউন্ট হয় সেটাও তারা দেখতে পারে। প্রত্যেক মিনিটে মিনিটে তারা এটা মনিটর করতে পারে। সেই ব্যবস্থা আছে। সাংবাদিকরাও সেটা মনিটর করেন। টাইম টু টাইম নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন।

১৭ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোট হয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, তিনদিন তাদের ভোট হয়েছে। এই তিন দিনের মধ্যে কোনো একটা দিন তারা ভোট দিতে পারবেন। এটা ডিস্ট্রিবিউশন করে দেয়া। ভোটকেন্দ্রে তাদের ভোটার বাক্স তিনদিন সংরক্ষিত থাকে। সেন্টারগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো। কোনো অভিযোগ ছিল না যে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট বাক্সের অসুবিধা রয়েছে।

রাশিয়ার নির্বাচন থেকে আমরা কী শিখেছি এমন প্রশ্নের জবাবে কে এম হুদা বলেন, তাদের যে শৃঙ্খলাবোধ যেমন- ভোটে তারা পোস্টারিং করে না, মাইকিং করে না। নির্বাচন কেন্দ্রের চারপাশে কোনো জটলা নেই। ডিজিটাল পদ্ধতিতে তারা যে প্রচারণা চালায়- সেই অবস্থায় আমরা যত তাড়াতাড়ি যেতে পারি ততই আমাদের ভালো হবে। এটাই আমার শিক্ষা।

সিইসি জানান, রাশিয়ায় ইভিএম পদ্ধতি নেই। তারা পাসপোর্ট দেখে ভোটারকে শনাক্ত করে। পরে একটা ব্যালট পেপার দেয়- সেটা বাক্সে রাখে। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সেটা ভেতরে ঢুকে যায়। কতজন ভোট দিলো সেটা সঙ্গে সঙ্গে মনিটরে দেখা যায়। ভোট গণনা হয় হাতে হাতে-বাই হ্যান্ড। ষাটোর্ধ ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা যারা ভোটকেন্দ্রের বাইরে থাকেন তাদের অনলাইনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। অ্যাপ ব্যবহার করে তারা যেকোনো জায়গায় বসে ভোট দিতে পারেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, রাশিয়ার নির্বাচন দেখতে ৪৯টি দেশের প্রায় আড়াই’শ পর্যবেক্ষক ছিল। ভোট হওয়ার পর ২০ তারিখে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের সঙ্গে গণমাধ্যমের মিটিং হয়। সেখানে পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন সম্পর্কে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমিও মতামত প্রকাশ করি। বলেছি, তাদের দেশের ডিজিটাল সিস্টেমটা আমার ভালো লেগেছে। এটা স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুধাবন করা যায়। কোনো রকমের বিষয় আমাদের চোখে আসেনি।

রাশিয়ার মতো ভোট বাংলাদেশে আপাতত সম্ভব নয়

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, রাশিয়ার মতো ভোট বাংলাদেশে আপাতত সম্ভব নয়। ওই রকম ভোট করতে বাংলাদেশের কত বছর লাগবে সেটাও তিনি জানেন না বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আমাদের ভোটের প্রযুক্তি নির্ভরতা বেড়ে গেলে ধীরে ধীরে প্রচারণার পদ্ধতিটা কমে যাবে। যতই আমরা প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাবো তত সুবিধা হবে।

আমাদের নির্বাচনের আস্থার সংকট প্রশ্নে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আস্থার সংকটের বিষয়টি রাজনৈতিক ব্যাপার। এটা বলতে পারবো না। আর তাদের ব্যালট পেপার তিনদিন রাখার মতো যে নিরাপত্তা অবকাঠামো আছে তা আমাদের এখানে নেই। গ্রাম-গঞ্জে ছোটখাটো টিনের চালা এমন কী ক্যাম্পের মধ্যে আমাদের নির্বাচন কেন্দ্র থাকে। ওই সব কেন্দ্রে তিনদিন ব্যালট পেপার রাখার মতো নিরাপত্তার সক্ষমতা আমাদের বৃদ্ধি পায়নি। অথবা সক্ষমতা নেই। তাদের শিক্ষা বা সামাজিক অবস্থার জন্য মানুষ একটি অবস্থানে পৌঁছে গেছে। আমাদের সেখানে যেতে একটু দেরি হবে।

সিইসি আরও বলেন, রাশিয়ায় ইভিএম নেই। তবে অন্যরকম ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা তাদের আছে। তারা হয়তো ইভিএম শুরু করবে। ম্যানুয়াল ভোটে আমাদের সমস্যা হয়-এটা আপনারা জানেন। আমরা জানি। সেকারণেই আমাদের কাছে ইভিএমের প্রচুর ডিমান্ড থাকে। নির্বাচন এলেই বিভিন্ন পর্যায় থেকে যেমন মন্ত্রী-এমপি ও প্রার্থীরা তার এলাকায় ইভিএম দেওয়ার অনুরোধ করেন। ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যাচ্ছে।

এইচএস/এমআরআর/জিকেএস