ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সার্ভার ও মেসেজ জটিলতায় টিকাদান কর্মসূচি

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল | প্রকাশিত: ০৬:০৪ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

 

মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মধ্যদুপুর। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন ধানমন্ডির ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয় প্রাঙ্গণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে আজ দেশব্যাপী চলমান বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি পরিদর্শনের জন্য এখানে আসেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। এ সময় সেখানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলমসহ স্বাস্থ্য বিভাগের অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুপুর আনুমানিক একটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ অন্যরা যখন সেখানে আসেন তখন ওই কেন্দ্রে টিকাগ্রহীতার লাইনে অর্ধশতাধিক পুরুষকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ড. আহমদ কায়কাউস টিকাদান কেন্দ্রে প্রবেশ করে টিকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ দুই-তিনজন পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর সেখানে নারীদের জন্য সংরক্ষিত লেখা টেবিলের সামনে কোনো টিকাগ্রহীতাকে না দেখে সকাল থেকে কতজন নারী টিকা নিয়েছেন তা দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান। সকাল ৯টা থেকে ওই সময় পর্যন্ত মাত্র ৬০ জন নারী টিকা নিয়েছেন শুনে তিনি প্রশ্ন করেন, নারীদের উপস্থিতি এত কম কেন?

কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে সারাদেশে ৭৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে টিকা কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্ধারিত সংখ্যক টিকা দেওয়ার কথা রয়েছে। আজ টিকা দেওয়া শেষ না হলে আগামীকালও এ টিকাদান কর্মসূচি চলবে। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকাদান করা সম্ভব হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের প্রস্থানের কয়েক মিনিট পর ওই টিকাকেন্দ্রের চিত্র পাল্টে যায়। এতক্ষণ ধরে যারা টিকা নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের দুই তৃতীয়াংশ লাইন থেকে সরে দাঁড়ান। যারা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের অনেকেই রেজিস্ট্রেশন না করেই সরাসরি জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে চলে আসেন। কিন্তু নিবন্ধন না থাকায় তাদের টিকা না দেওয়ায় টিকাগ্রহীতার সংখ্যা আরও কমে যায়।

সেখানে অনেকেই বলাবলি করেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আসার কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কর্মীরা গণমাধ্যমকর্মীদের দেখাতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।

তার আগে দুপুর পৌনে ১২টায় সরেজমিনে দেখা যায়, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার কার্যালয়ের সামনে অল্পসংখ্যক নারী ও পুরুষের জমায়েত। টিকাদান কেন্দ্রে যারা এসেছেন তাদের সিরিয়াল ধরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এ কেন্দ্রটি পরিদর্শনে আসার আগাম খবর পেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সেখানে উপস্থিত হন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ধানমন্ডি এলাকার লোকজনের অধিকাংশই ইতোমধ্যে টিকা নেওয়ার ফলে হয়তো ভিড় তুলনামূলক কম।

ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে সারাদেশে আজ ৭৫ লাখ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। টার্গেট পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই টিকাদান চলবে। তবে ঠিক কতদিন এই কার্যক্রম চলবে তা তিনি বলতে চাননি।

প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে ২৫ বছরের বেশি বয়সী মোট ৭৫ লাখ পুরুষ ও নারী জনগোষ্ঠীকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আজ দেশব্যাপী হাজার হাজার কেন্দ্রে বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে ধানমন্ডির এ কেন্দ্রটির মতো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্য কেন্দ্রেও উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা যায়। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে দুপুর আড়াইটা থেকে টিকাদান শুরু হয়েছে। আগামীকালও তারা টিকাদান কর্মসূচি চালাবে বলে আগাম ঘোষণা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিকাদান কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত একাধিক স্বাস্থ্যকর্মীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সার্ভার জটিলতার কারণে সকালের দিকে অনেকেই টিকা নিতে না পেরে ফিরে গেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে যোগাযোগ ও টিকাদানের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও প্রচার-প্রচারণা না থাকায় টিকা গ্রহণেচ্ছুদের ভিড় কম হয়েছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারদের অনেকেই বলেছেন, তারা প্রচার-প্রচারণা বা প্রস্তুতির জন্য খুবই কম সময় পেয়েছেন।

এদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ২৫ বছরের বেশি বয়সী নিবন্ধনকারীদের ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে টিকা গ্রহণের জন্য ডাকা হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র ও নিবন্ধন কার্ড সঙ্গে এনে টিকা নিতে পারবেন। তবে আজ অনেকেই ক্ষুদে বার্তা পাননি বলে আসেননি। আবার অনেকেই ক্ষুদে বার্তা না পেলেও এসেছেন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, টিকা গ্রহণকারীদের অনেকেই চীনা টিকা গণহারে দেওয়া হচ্ছে, এটি মানসম্মত নয় এমনটা ভেবে টিকা নিতে আসেননি বলে তারা জানতে পেরেছেন। তবে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব বলেন, আমাদের দেশে যেসব দেশের টিকা দেওয়া হচ্ছে সেগুলোর সবগুলোই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ও মানে ভালো। তিনি আরও বলেন, ৭৫ লাখ টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা আজ মঙ্গলবার পূরণ না হলে আগামীকালও কার্যক্রম চলবে।

এমইউ/এমআরআর/এমএস