করোনা মোকাবিলা ও চিকিৎসাসেবায় বিএসএমএমইউয়ের ভূমিকা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসাসেবায় গত প্রায় দেড় বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। শুরুর দিকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কম থাকলেও দু-এক মাস পরই এ হার দ্রুত শুরু করে।
এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে দেশের অন্যতম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিএসএমএমইউ টেলিমেডিসিন সেবা, ফিভার ক্লিনিক চালু, করোনা শনাক্তকরণে নমুনা পরীক্ষা, করোনা রোগীদের ভর্তি ও চিকিৎসা, কোভিড-১৯ ফলোআপ ক্লিনিক, বিশেষজ্ঞ হেলথ লাইন, হেলপলাইন, অনলাইন সেবা ও করোনার টিকাদানসহ চিকিৎসাসেবা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চালু করে।
মাস দুই-তিন আগে যখন করোনার সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়তে থাকে, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের ভর্তি ও সুচিকিৎসা প্রদান অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, তখনই বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ হাজার শয্যার কোভিড ফিল্ড হাসপাতাল চালু করে।
বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের (২০২০ সালের) ২১ মার্চ রাজধানীর শাহবাগের বেতার ভবনে জ্বর, সর্দি-কাশির রোগীদের জন্য ফিভার ক্লিনিক চালু হয়। গত বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বেতার ভবনের ফিভার ক্লিনিকে মোট ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৪১ জন রোগী সেবা নিয়েছেন।
করোনাভাইরাস শনাক্তে সন্দেহভাজন রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করার জন্য গত বছরের ১ এপ্রিল শাহবাগের বেতার ভবনে আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি চালু করা হয়। এ ল্যাবে গত ৮ সেপ্টম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৮৬ হাজার ১৬০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
বিএসএমএমইউ’র কেবিন ব্লকে করোনা সেন্টারে গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ১৩ হাজার ৫৭ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন ৬ হাজার ৭১১ জন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা গেছে, এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৫ হাজার ৬৪১ জন। বর্তমানে করোনা সেন্টারে ভর্তি আছেন ৯৫ জন। আইসিইউতে আছেন ১৪ জন। ওইদিন আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হন ৯ জন।
এদিকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কোভিড ফিল্ড হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৫৮০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন ২৯২ জন রোগী। ওই সময়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ২০৭ জন এবং ভর্তি ছিলেন ৪৬ জন রোগী।
বিএসএমএমইউ’র ডক্টরস ডরমিটরিতে গত বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) ৩৮৪ জনসহ সিনোফার্মের ভেরোসেলের প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ১৩ হাজার ৪৫৬ জন। এর আগের দিন ৭ সেপ্টেম্বর ২ জনসহ ফাইজারের প্রথম ডোজের টিকা নেন ১০ হাজার ৬ শত ৩৬ জন। ৮ সেপ্টেম্বর ২৯ জনসহ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেন ৪৯ হাজার ৩৭২ জন এবং গত ২৯ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৩৫ হাজার ২৭৫ জন মডার্নার প্রথম ডোজের টিকা নেন।
গত বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মসহ হাসপাতালটিতে মোট ১ লাখ ৮ হাজার ৭৪৯ জন মানুষ প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন। একই সময়ে দ্বিতীয় ডোজের অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন ৪৮ হাজার ৮৫৪ জন।
এছাড়া গত মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৮ হাজার ৩৭৯ জন এবং ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মডার্নার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ২২ হাজার ৯৩০ জন। মোট দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৮০ হাজার ১৬৩ জন।
বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার এ-ব্লক অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত চিকিৎসকদের সাহস ও মনোবল বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।
এমইউ/এমকেআর/এমএস