ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

শনাক্ত-মৃত্যুর নিম্নমুখী হার স্বস্তির হলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নয়

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০১:৫৫ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির মতে সারাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কারণে সংক্রমণ হারে উন্নতি দেখা যাচ্ছে। সর্বোচ্চ সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার অনেকটাই কমে কিছুটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় এসেছে। যদিও সংক্রমণ এবং মৃত্যু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৪৫তম অনলাইন সভায় এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কমিটির বিশেষ আমন্ত্রণে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা সভায় উপস্থিত হয়ে আলোচনায় অংশ নেন। সভায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও ভ্যাকসিনসহ জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যক্রমের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ গতিবিধি/করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

সভায় বলা হয়, জীবিকা ও দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার উদ্দেশ্যে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা সাপেক্ষে প্রায় সবকিছুই খুলে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ১৭ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে সরকার অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ইতোমধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের এবং হলে অবস্থানকারী ১৮ ও তদূর্ধ্ব বয়সী ছাত্রছাত্রীদের টিকা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ১৮ ও তদূর্ধ্ব বয়সী ছাত্রছাত্রীদের টিকার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য প্রয়োজনীয় গাইডলাইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে যা সভায় উপস্থাপিত হয়। জাতীয় পরামর্শক কমিটির রোগতত্ত্ব বিষয়ক কমিটি আমন্ত্রিত অতিথি ও কমিটির সামনে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সবার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো গৃহীত হয়।

সুপারিশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ কখন এবং কিভাবে পুনরায় চালু করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে তা হলো:

সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক/কর্মচারী এবং সমাজের সবার মঙ্গল এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে তাদের সব ধরনের ঝুঁকি কমানোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা করা। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এবং কোভিড-১৯ রোগের পরবর্তী সংক্রমণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দিলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা আবশ্যক:

প্রি-স্কুল ব্যতীত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেওয়া যেতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করা এবং ব্যতয় হলে সে বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা কেন্দ্রীয়ভাবে সব শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত মানসম্পন্ন এবং সঠিক মাপের মাস্কের ব্যবস্থা ও বিতরণ করা। একইসঙ্গে অন্যান্য জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পদক্ষেপগুলো যেমন- হাত পরিষ্কার রাখা (হাত ধোয়া/হাত জীবাণুমুক্তকরণ স্টেশন স্থাপন করা) এবং সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করা দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শিক্ষক এবং কর্মচারীকে কোভিড-১৯ এর টিকা নেওয়া থাকতে হবে, এবং তারা দ্বিতীয় ডোজের ১৪ দিন পার হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে প্রথম ডোজের ১৪ দিন পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ১৮ বছরের অধিক বয়সী শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রেণিকক্ষে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে সমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নির্দিষ্ট ক্লাস কোনটি সপ্তাহের কোনদিন হবে তা ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন- প্রথমদিকে পরীক্ষার্থীদের ক্লাস প্রতিদিন খোলা রাখা ছাড়া বাকি সব ক্লাস সপ্তাহের এক/দুই দিন খোলা রাখা যেতে পারে। এতে করে একটি নির্দিষ্ট দিনে যেই ক্লাসটি খোলা থাকবে তার শিক্ষার্থীরা অন্যান্য খালি শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহার করে তাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে বসতে পারবে। প্রাতঃসমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ একটি এসওপি প্রস্তুত করবে। এছাড়া প্রথমদিকে স্বল্প সময়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ খোলা রাখা যাতে করে খাবার গ্রহণের জন্য মাস্ক খোলার প্রয়োজন না হয়।

আবাসিক সুবিধা সম্বলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিম্নোক্ত পরামর্শ প্রযোজ্য (মাদরাসাসহ):

সব সমাবেশ স্থানসমূহ (ক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং, টিভি/স্পোর্টস রুম, ইত্যাদি) বন্ধ রাখা। রান্নাঘর থেকে কক্ষে সরাসরি খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা থাকা। একাধিক শিক্ষার্থী একই বিছানা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে। মাদরাসায় একসঙ্গে নামাজ, সমাবেশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলা। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি এসওপি প্রস্তুত করা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেওয়ার আগে ‘করনীয়” এবং ‘বর্জনীয়’ কাজ সম্পর্কে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মচারীদের একটি ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। এই ওরিয়েন্টেশন সীমিত উপস্থিতি ও নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে সশরীরে আয়োজন করা যেতে পারে তবে প্রয়োজনে অনলাইন সেশন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সংক্রান্ত তথ্য সম্বলিত লিফলেট তৈরি এবং বিতরণ করা এবং ‘করনীয়’ এবং ‘বর্জনীয়’ বিষয়গুলো গণমাধ্যম এবং স্থানীয় ক্যাবল লাইনের মাধ্যমে টেলিভিশনে প্রচার করা যেতে পারে। যেসব শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ এর লক্ষণ থাকবে তাদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিন/আইসোলেশন এবং এ সময় তাদের শুশ্রূষার জন্য নির্দেশনা এই ওরিয়েন্টেশনে থাকতে হবে।

যেসব শিক্ষার্থীদের রোগের লক্ষণ পাওয়া যাবে অথবা তাদের পরিবারের কারও এরকম লক্ষণ থাকবে অথবা কোভিড-১৯ রোগ পাওয়া যাবে তাদেরকে অনুপস্থিত গণ্য না করে ১৪ দিন বাড়িতে থাকার অনুমতি দিতে হবে। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এসওপি ও প্রচারণাপত্র প্রস্তুত করা দরকার।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ এবং দৈনিক রিপোর্ট করতে হবে। নির্বাচিত কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষা এবং সার্ভিল্যান্সের প্রোটোকল তৈরি এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব জেলায় ল্যাব আছে সেসব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই সার্ভিল্যান্সের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।

যেসব জেলায় সংক্রমণের হার বেশি (শনাক্তের হার ≥২০ শতাংশ বা কেসের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা (আগের সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে ৩০ শতাংশের বেশি সংখ্যক কেস), সেই জেলাগুলোতে আরও নিবিড় সার্ভিল্যান্স থাকা উচিত।

এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষের দ্বারা পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত এসওপি তৈরি করতে হবে। এবং সব বিধিনিষেধ সুষ্ঠুভাবে পালনের লক্ষ্যে মনিটরিং টিম গঠন করে দৈনিক মনিটরিং করতে হবে বলেও সভায় মত দেওয়া হয়।

এমইউ/এমআরআর/জেআইএম