ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সাবরিনার জেকেজির পথেই হাঁটছিল আল-আমিনের টিকেএস

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:৪৮ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১

গত বছর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে জেকেজি হেলথকেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট জালিয়াতির ঘটনায় আলোচনায় আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় ডা. সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফকে। ওই মামলায় তারা এখন কারাগারে। এমনই আরেকটি ঘটনায় প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সারাদেশে করোনার নমুনা সংগ্রহ বুথ ও অস্থায়ী ল্যাবরেটরি স্থাপনের অনুমতি চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল টিকেএস হেলথকেয়ার লিমিটেড। অনুমতি মেলেনি। তবে সেজন্য তারা বসেও থাকেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাকিয়া পারভীনের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া পরিপত্র বানিয়ে নিজেরাই নিজেদের অনুমতি দেয়। পরিপত্রে মুজিববর্ষের লোগো ব্যবহার করেছিল তারা। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী শুরু করে কার্যক্রম। আট বিভাগ, ৬৪ জেলা, ৪৯২ উপজেলা ও চার হাজার ৫৬২ ইউনিয়নে নিয়োগের নামে হাতিয়ে নিচ্ছিল কোটি কোটি টাকা।

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যানসহ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) গুলশান বিভাগ। মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা ও ঝালকাঠি জেলা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- টিকেএস গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল্লাহ আল-আমিন, চেয়ারম্যান আবুল হাসান তুষার ও মার্কেটিং ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহিন মিয়া।

jagonews24

বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ডিবি-উত্তর) হারুন-অর রশীদ এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘আবুল হাসান তুষার নামের এক ব্যক্তি গত ১১ জুলাই সারাদেশে করোনার নমুনা সংগ্রহের বুথ বসিয়ে নিজেদের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন। মন্ত্রণালয় তার আবেদনের ভিত্তিতে কোনো অনুমতি বা অনুমোদন দেয়নি। এক সপ্তাহ পর তারা একটি ভুয়া পরিপত্র বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেন। তাতে লেখা ছিল, ১১ জুলাইয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী কোভিড-১৯ র‌্যাপিড টেস্টের সব সরঞ্জাম আসার পর এবং দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রাথমিকভাবে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট দিয়ে টিকেএস হেলথ কেয়ার লিমিটেডকে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে কাজ শুরু করার অনুমোদন দেওয়া হলো।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে দৈনিক আড়াই হাজার টাকা বেতনে পাঁচ শতাধিক জনবল নিয়োগের বিজ্ঞাপন ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় টিকেএস গ্রুপ। বিজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কোভিড-১৯ র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য সারাদেশে কিছুসংখ্যক লোক প্রয়োজন। প্রকল্পের মেয়াদ ৯০ দিন।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করা বিজ্ঞাপনের সঙ্গে বলা হয়েছিল, এই কাজ করার সুযোগ আমাদের হাতে থাকায় গ্রুপে এটি পোস্ট করা। আমরা চাচ্ছি আপনাদের ব্যাচমেট বন্ধুরা কাজটা করার সুযোগ গ্রহণ করুক। যাদের কাজটা খুবই প্রয়োজন, শুধু তারাই আমাদের নক করবেন। বরিশাল বাদে বাকি বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় একজন করে মোট ৫২০ জন প্রয়োজন। বেতন আড়াই হাজার টাকা প্রতিদিন। আগ্রহীরা নিচের ফরমের মাধ্যমে আবেদন করুন। প্রার্থীকে অবশ্যই নিজ জেলা-উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।’

jagonews24

হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘করোনা পরীক্ষার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তারা আরও বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। তারা টিকেএস গ্রুপের ব্যানারে আরও সাতটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল। সেগুলো হলো- টিকেএস ফার্মাসিটিউক্যালস লিমিটেড, টিকেএস মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, টিকেএস কার্নিভার ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ, টিকেএস মার্কেটিং লিমিটেড, টিকেএস ফাউন্ডেশন ও টিকেএস ২৪ নামের একটি সংবাদমাধ্যম।’

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেফতার আবুল হাসান তুষার একটি বেসরকারি ব্যাংকের জনসংযোগ শাখায় কর্মরত ছিলেন। করোনাকালে তার চাকরি চলে যায়। তখন আল-আমিন নামে পরিচিত একজন তাকে নামসর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠান খোলার পরামর্শ দেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, বড় অঙ্কের ব্যাংক ঋণ নিয়ে ও মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অল্প সময়ে বিত্তশালী হওয়া।’

গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

যুগ্ম কমিশনার হারুন আরও বলেন, ‘এর আগেও প্রতারক সাবরিনা ও সাহেদদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সুতরাং আমরা জানাতে চাই, কেউ প্রতারিত হবেন না। কোথাও টাকা দেয়ার আগে যাচাই করুন।’

এক প্রশ্নের জবাবে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। আইজিপির স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। যারাই এই কোভিড পরিস্থিতিকে অপব্যবহার করে জাল-জালিয়াতি-প্রতারণার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারাদেশে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

টিটি/ইএ/এএসএম