ময়নাতদন্তে জানা গেলো গাঙ্গেয় ডলফিনটির মৃত্যুর কারণ
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে প্রাপ্ত একটি গাঙ্গেয় ডলফিনের ময়নাতদন্ত করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) একদল গবেষক৷ ময়নাতদন্ত শেষে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ডলফিনটি জালে আটকা পড়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে পিঠে আঘাতের কারণে সেটির মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সিভাসুতে এ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
জানা গেছে, গত ১ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার হামিদ চর এলাকায় কর্ণফুলী নদী থেকে একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়৷ ওইদিনই ডলফিনটির প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন- চবি প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া, চট্টগ্রাম বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জার মো. ইসমাইল হোসেন এবং বন বিভাগের কর্মী অজয় দেব। এরপর ডলফিনটি চবি হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষণ করা হয়। আজ সিভাসুতে একদল গবেষকের উপস্থিতিতে সেটির ময়নাতদন্ত করা হয়।
এতে অংশ নেন চবি হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া, সিভাসুর প্যাথলজি অ্যান্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, অ্যানাটমি অ্যান্ড হিস্টোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার, ফিশারিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর এবং সিভাসু ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. ভজন চন্দ্র দাস।
গবেষকরা জানান, গাঙ্গেয় ডলফিন বিপন্ন প্রজাতিভুক্ত প্রাণী। যাদের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। এ গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিমান প্রাণীটি নদীর স্বাস্থ্য উপলব্ধির বায়োলজিক্যাল প্যারামিটার। বর্তমান পৃথিবীতে এ প্রজাতির ডলফিন রয়েছে মাত্র এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৮০০টি। বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে এ প্রজাতির ডলফিন রয়েছে মাত্র ১২৭টি।
গবেষকরা আরও জানান, সম্প্রতি চট্টগ্রামের হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে বেশ কয়েকটি ডলফিন মারা যায়। বিপন্নপ্রায় এ প্রাণীটির মৃত্যুর কারণ যদি চিহ্নিত করা না যায়, তবে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকবে এবং একপর্যায়ে প্রাণীটি হারিয়ে যাবে। তাই চট্টগ্রামের নদীতে ডলফিন মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করতে একটির ময়নাতদন্ত করা হয়।
জানতে চাইলে ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া জাগো নিউজকে বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রামের হালদা-কর্ণফুলী নদীতে বেশ কয়েকটি মৃত ডলফিন পাওয়া যায়। আমরা এতদিন ডলফিনগুলোর মৃত্যুর কারণ মৌখিকভাবে বলেছি। কিন্তু বিপন্নপ্রায় প্রাণীটি রক্ষায় এদের মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা জরুরি। তাই আজকে একটি ডলফিনের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে এ ময়নাতদন্ত করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, জালে আটকা পড়ে ডলফিনটির শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়৷ এরপর পিঠে আঘাতের কারণে ডলফিনটির মৃত্যু হয়। তবে আরও গবেষণা শেষে ডলফিনটির মৃত্যুর বিস্তারিত কারণ জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের পর ডলফিন সংরক্ষণে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আরও তৎপর হতে হবে। এখন থেকে সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে বিপন্নপ্রায় প্রাণীটি হারিয়ে যাবে।
মিজানুর রহমান/এমইউএইচ/এমআরআর/জিকেএস