করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে ফের বিধিনিষেধ : প্রতিমন্ত্রী
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে ফের বিধিনিষেধ (লকডাউন) দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে সরকারের পরবর্তী কৌশল কী হবে, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুটি কৌশলই আমরা অবলম্বন করব। একটা হলো বিধিনিষেধ বা লকডাউন দেয়া। আরেকটি হচ্ছে ছেড়ে দেয়া। কিন্তু সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।’
তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হলে আবার লকডাউন দেবেন, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, পৃথিবীর যে কোনো দেশে বাড়লেই, যেমন- অস্ট্রেলিয়ায় সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে, কারফিউ দেয়া হয়েছে। আমেরিকায় দেয়া হয়েছে। দেয়া হচ্ছে কেন? কারণ এর কোনো বিকল্প নেই।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত বছর প্রথমবারের মতো বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এরপর আরও কয়েক দফায় তা আরোপ ও শিথিল করা হয়। সর্বশেষ গত ১ জুলাই থেকে চলাচলে আবারও বিধিনিষেধ শুরু হয়। পরে তা কয়েক দফায় বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
প্রথমে ১ জুলাই থেকে জারি করা বিধিনিষেধে রফতানিমুখী শিল্পকারখানা ছাড়া সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে আটদিনের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। ওই সময় সবকিছুই শর্তসাপেক্ষে খুলে দেয়া হয়।
ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আবারও বিধিনিষেধ জারি হয়। এ দফার বিধিনিষেধ চলাকালে পোশাক কারখানাসহ সব ধরনের শিল্পকারখানা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। জরুরি সেবা, গণমাধ্যম ও খাদ্য উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট পরিবহন ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহনও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়।
শিল্প মালিকদের দাবির মুখে ১ আগস্ট থেকে খুলে দেয়া হয় রফতানিমুখী কারখানা। এরপর ৬ আগস্ট থেকে ফ্লাইট চালু করা হয় অভ্যন্তরীণ রুটে। এরপর ১১ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও গণপরিবহন চালুর মাধ্যমে বিধিনিষেধ প্রায় পুরোটাই তুলে নেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন পেশার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিধিনিষেধ শিথিল করা প্রয়োজন হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যদিও পরিস্থিতি কিন্তু এখনও সন্তোষজনক নয়। সংক্রমণ আমাদের ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ শিথিল করার ধারাবাহিতায় আজ আরেকটি প্রজ্ঞাপন হয়েছে। এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আসন সংখ্যার অর্ধেক ব্যবহার করে পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র চালু করতে বলা হয়েছে। প্রথমে ১১ আগস্ট থেকে অর্ধেক সংখ্যক গাড়ি নিয়ে চালু হয়, ১৯ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুরোপুরি চালু হবে।’
‘নিউ নরমাল লাইফে আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি তাহলে সংক্রমণ এড়িয়ে চলতে পারব। আমাদের এখন স্বাস্থ্যবিধির উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। মাস্ক পরে, শারীরিক দূরত্ব মেনে সবাই তারা তাদের কাজগুলো করবে, সেটিই আমরা প্রত্যাশা করি। আমাদের সংক্রামক ব্যাধি আইন আছে, কেউ আইন ভাঙলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
সরকার করোনা সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে চায় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তাই আমাদের এই জীবনের মধ্যেই অভ্যস্ত হতে হবে। দুটির সমন্বয় আমাদের করতে হবে, অর্থনীতির গতিধারাও আমাদের বজায় রাখতে হবে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতে ভালো থাকে, সেটি দেখাও সরকারের প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘সরকার যথেষ্ট করেছে বলে এটা একটা জায়গায় আটকে গেছে। না হলে করোনা সংক্রমণ বিস্ফোরণ ঘটতে পারত। আমরা চাই সকলে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক অবস্থা চালু রেখে যাতে সবকিছু করতে পারি।’
অভিযোগ আছে, বিধিনিষেধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না- এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন, তাদের সঙ্গে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছি, কতটুকু করতে পারবে কতটুকু করতে পারবে না। সেগুলো বুঝেই আমরা করেছি। আলোচনা না করার কারণে সমস্যা হয়েছে তা নয়।’
আমলাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়- এ বিষয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘যোগাযোগ সকলের সঙ্গে আছে। আমরা এই পরিস্থিতিগুলো বুঝি। সবাই বার্গেইনিং করতে চায়, এটা হচ্ছে মেইন বিষয়। সরকার সব সময় বুঝেশুনে... সব সময় আমরা আলোচনা করি। মাঠের বিভিন্ন তথ্য থাকে আমাদের হাতে। আমাদের সংক্রামক ব্যাধি আইন আছে, সেই আইনে আছে, কোনটা কে করবে।’
আরএমএম/এমএইচআর/এমএস/এএসএম