ঘোষণা হচ্ছে ৫০-এর নিচে টিকা নয়, তদবিরে পাচ্ছেন তরুণরাও!
বয়সের ভারে ন্যুব্জ ৮৫ বছরের রহিমা বেগম। তবুও নাতির হাত ধরে এসেছেন টিকা নিতে। টিকা নেয়ার পর তার নাতি কেন্দ্রের বাইরে একটি চেয়ারে রহিমাকে বসিয়ে দেন।
টিকা নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি-না, উদ্বিগ্ন নাতির এমন প্রশ্নে রহিমার জবাব, ‘নারে ভাই, কোনো সমস্যা নাই। চল আমরা বাড়ি যাই।’
গণটিকাদান কর্মসূচীর দ্বিতীয়দিনে রোববার (৮ আগস্ট) রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
টিকা নিয়ে ফেরার পথে রহিমার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি কুড়েরহাট এলাকার বাসিন্দা। রহিমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা যেন না হয়, সেজন্য টিকা নিতে এসেছিলাম। টিকা নিয়েছি। এখন আল্লাহর রহমতে শারীরিক কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
সরেজমিন দেখা গেছে, ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে নারী-পুরুষের উপচেপড়া ভিড়। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। কেউ কেউ মাস্ক ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছেন। দৃশ্যত গণটিকা কেন্দ্র যেন করোনা সংক্রমণের বিস্তৃতিকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
রোববার সকাল থেকেই ২৫ বছরের বেশি বয়সীরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তবে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকরা বারবার বাইরে এসে জানাচ্ছেন- ৫০ বছরের কমবয়সী কাউকে আজ টিকা দেয়া হবে না। তাদের ফিরে যেতে বলছেন তারা। স্বেচ্ছাসেবকদের এমন ঘোষণায় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ৫০ বছরের কমবয়সীরা হৈ চৈ শুরু করেন।
তবে টিকাকেন্দ্রে আসা সব বয়সী মানুষের অভিযোগ- স্বেচ্ছাসেবকরা ৫০ বছরের কমবয়সীদের ফিরে যেতে বললেও নিজেদের পরিচিত ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী অনেককে সিরিয়াল ছাড়াই ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন। তারা ভেতরে গিয়ে ঠিকই টিকা নিয়ে বের হচ্ছেন।
মধ্যবয়সী আবদুল আজিজ বলেন, ‘সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। সামনে থেকে লাইন এগোচ্ছে না। এখানে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা কৌশলে নিজেদের পরিচিত লোকজন এবং বন্ধু-বান্ধবীদের কেন্দ্রে ঢুকিয়ে টিকা নিতে সুযোগ করে দিচ্ছেন।’
৭৫ বছরের এক বৃদ্ধা গণটিকাদান শুরুর প্রথমদিন শনিবার টিকা নিতে এসে ফিরে যান। তিনি আজ দ্বিতীয়দিনে টিকাকেন্দ্রে এসেও টিকা নিতে পারেননি।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এনআইডি আনার পরও স্বেচ্ছাসেবকরা বলছে- ফরম পূরণ করে আনতে হবে। ফরম পূরণের জন্য ৫০ টাকা দিয়েছি। কার্ড নিয়ে এসেও এখন টিকা পাচ্ছি না। এই বয়সে বারবার টিকাকেন্দ্রে এসে ফিরে যাওয়া খুব কষ্টকর।’
তবে দলীয় বিবেচনায় টিকা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩৫০ জনকে টিকা দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ৫০ বছরের বেশি বয়সী, প্রতিবন্ধী ও নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। কিন্তু টিকাকেন্দ্রে বেশি মানুষ আসায় অনেকেই ফিরে যাচ্ছেনা। তবে পর্যায়ক্রমে সবাইকে টিকা দেয়া হবে।’
এমইউ/এএএইচ/এমকেএইচ