রাজধানীতে ঝুম বৃষ্টির মধ্যেও বেড়েছে মানুষের চলাচল
দেশে সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের উপর দিয়ে ঝোড়ো হওয়া বয়ে যাচ্ছে। ঢাকাসহ চার বিভাগে অতিভারি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। দুপুর থেকে রাজধানীতে অঝোরে বৃষ্টির মধ্যেও বেড়েছে মানুষের চলাচল ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ।
যদিও বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন থেকেই সড়কে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে। তবে, মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মামলা ও জরিমানা দেয়ার হারও।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) সকাল থেকে রাজধানীর গাবতলী, শ্যামলী, মিরপুর, বাড্ডা, উত্তরা, মহাখালী, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, কলাবাগান, ধানমন্ডি-৩২, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, আসাদগেট, বিজয় সরণি, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর ও মৎস্য ভবন, কাকরাইল, পল্টন ও মতিঝিল এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
আজ লকডাউনের সপ্তম দিন চলছে। এদিন সরেজমিনে সড়কে দেখা যায়, হেঁটে, মোটরসাইকেলে, বাইসাইকেলে ও ব্যক্তিগত গাড়িতে বাইরে বের হয়েছে মানুষ। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে বাইরে আসা মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যারা অকারণে বাইরে বের হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যদিও হাতেগোনা কয়েকটি চেকপোস্ট ছাড়া বাকিগুলোতে অন্যান্য দিনের চেয়ে ঢিলেঢালাভাব দেখা গেছে।
এদিকে ঝুম বৃষ্টির মধ্যেও ব্যক্তিগত গাড়ি হাকিয়ে চলাচল করছেন অনেকে। এছাড়া মোটরসাইকেলচালক-আরোহীকে রেইনকোট ও রিকশা যাত্রীদের পলিথিন দিয়ে ঢেকে চলাচল করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অন্যান্য দিনের মতো সকাল থেকে কড়াকড়ি চেকপোস্ট লক্ষ করা গেছে। চারদিক থেকে আসা রিকশা ও অন্যান্য ব্যক্তিগত গাড়ি জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের। যারা বিনা কারণে বাইরে বের হয়ে সদুত্তর দিতে পারছেন না তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা দেয়া হচ্ছে। অনেককে আবার গ্রেফতারও করা হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার পাশের চেকপোস্টে বিকেলের দিকে পুলিশ সদস্যের দেখা মিললেও কোনো গাড়ি কিংবা মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়নি। কোনোরকম জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই চলাচল করতে পারছে মানুষ।
এই চেকপোস্টে আফজাল খান নামে এক মোটরসাইকেল চালকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি মোটরসাইকেল নিয়ে কেন বের হয়েছেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাসায় থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এছাড়া কারওয়ান বাজারে একটু কাজ ছিল।’
রাজধানীর ফার্মগেট মোড়ে দেখা যায়নি পুলিশের চেকপোস্ট। মাঝে মাঝে দু-একটি গাড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিতে দেখা যায় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের।
রাজধানীতে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা তৎপর রয়েছেন।
এদিকে, অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ সড়কে যানবাহন বেশি কেন- এমন প্রশ্নে সড়কে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, যারা বাইরে বের হচ্ছে, তারা প্রয়োজনীয় কারণ দেখিয়েই বের হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তাদের বেশিকিছু বলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে কিছু কিছু অফিস খোলা রয়েছে। ফলে সড়কে মানুষের চাপ কিছুটা বেড়েছে।
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শেখ মোহাম্মদ শামীম বলেন, ‘অন্যান্য দিনের চেয়ে রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বেড়েছে। আজ সাইকেলেও অনেক মানুষকে বাইরে বের হতে দেখা গেছে। আমরা সড়কে আছি, বাইরে বের হওয়া মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। বাইরে বের হওয়া বেশিরভাগই যৌক্তিক কারণ দেখাচ্ছেন। যারা যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারছেন না, আমরা তাদের মামলা দিচ্ছি।’
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হাতে গ্রেফতার হন ৫৬২ জন। ২০৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয় এক লাখ ৬১ হাজার ৩০০ টাকা।
এছাড়া ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক ৪৮৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ১১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ছয়দিনে রাজধানীতে মোট গ্রেফতার হন তিন হাজার ৫৬ জন।
টিটি/এমআরআর/এএসএম