গাবতলীতে ঘরমুখো মানুষের ভিড়
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি ভবনে চার বছর ধরে নিরাপত্তার প্রহরী হিসেবে কাজ করেন রাসেল। ঈদের আগে ছুটি না পাওয়ায় বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন ঈদের দ্বিতীয় দিনে।
তবে আগামীকাল শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে শুরু হতে যাওয়া সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে তার ছুটির আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে।
১০ দিনের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে না পারার শঙ্কায় বাড়ির মালিককে বলেছেন- ‘ছুটি শেষে না ফিরলে যেন অন্য লোককে কাজে নিয়ে নেয়।’
তিনি আরও বলেন বলেন, ‘সাতক্ষীরার টিকিট ৩০০ টাকা বেশি নিয়েছে। ঈদের সময় বেশি নেয়। যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী ৮০ টাকা করে ভাড়া নিয়েছে। গতকাল মালিকের গরু কাইটা দিছি, আজকে মাংস লইয়া বাসায় যামু। পরিবার-পরিজনের লগে থাকমু। লকডাউন বাড়লে বাড়িতেই থাকতে হইব, আসতে তো পারুম না।’
শুক্রবার থেকে ফের শুরু হচ্ছে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ। এতে উপার্জন বন্ধের আশঙ্কায় ঢাকা ছাড়ছেন অনেকেই। বিধিনিষেধে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে—এমন ঘোষণায় অনেকে ঈদের ছুটি সংক্ষিপ্ত করে ঢাকায় ফিরছেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) সকাল থেকেই গাবতলী বাস টার্মিনালে মানুষের ঢল নামে। বিধিনিষেধের দীর্ঘ ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে যারা গ্রামে ছুটছেন, তাদের বেশিরভাগই নিম্নআয়ের মানুষ।
টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন অনেক যাত্রী। মহাসড়কে চাপ না থাকায় বাস ও আসছেন সময়মত। তবে যাত্রী পরিবহনে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
নির্দেশনা অনুযায়ী—দুই সিটে একজন যাত্রী পরিবহনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বাস আসলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। অনেকের মুখে নেই মাস্কও।
ঈগল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আক্তার হোসেন বলেন, ‘গাড়ি কম, তবে যাত্রী আছে। আর যশোর, খুলনার দুইটা গাড়ি যাবে কিছুক্ষণ পর। বাসের সব টিকিটি বিক্রি হয়ে গেছে।’
সোনালী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার বিল্লাল বলেন, ‘যাত্রীর ভালোই চাপ আছে। বিকেলে আমাদের দুইটা গাড়ি ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। অল্প কিছু সিট ফাঁকা আছে। রাস্তায় এখন যানজট নেই, দ্রুতই বাসগুলো আসতে পারছে।’
সার্বিক পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার শামীম বলেন, ‘নিম্নআয়ের অনেকে ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা মাংস নিয়ে গ্রামে পরিবার-পরিজনের কাছে যেতে চাইছেন। তারাই আজ বেশি বাড়ি যাচ্ছেন।’
ভ্যানে ফল বিক্রি করেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ইয়াসিম আলী। তিনি যাবেন দিনাজপুর। ইয়াসিম বলেন, ‘ঈদের দিন গরু বানানোর কাজ করছি। পাঁচ হাজার টাকা ও কিছু মাংস নিয়া বাড়ি যাচ্ছি। লকডাউন বাড়লে এলাকায় কিছু কইরা থাকমু, পরে আবার ঢাকা আসমু।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুইদিন পর পর লকডাউন দেয়, এসব আর ভালো লাগে না। আমাদের মত গরিব মানুষের জন্য উপার্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে, এইটা সরকার বুঝে না।’
এসএম/এএএইচ/এমএস