কারওয়ান বাজারে কামারপট্টিতে বেড়েছে ব্যস্ততা, বিক্রি কম
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কামারপট্টিতে ছুরি, চাপাতি, বটির দোকানের আশপাশে গেলেই কানে আসছে হাতুড়ি দিয়ে লোহা পেটানোর টুং টাং শব্দ। কোনো কোনো দোকানে শান দেয়ার আওয়াজ। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার ছুরি, চাপাতি, কুড়াল কিনতে কামারপট্টিতে ঢুঁ দিচ্ছেন ক্রেতারা।
কাওরান বাজারের কামার দোকানগুলোতে এখন ব্যস্ত সময় কাটছে কামারদের। অগ্রিম অর্ডার করা ছাড়াও বিক্রির জন্য ছুরি-চাপাতি, দা-বটি সাজিয়ে রেখেছেন দোকানের সামনে।
দোকানিদের দাবি–করোনাভাইরাস মহামারি, বন্যা ও বিদেশি সরঞ্জামের জনপ্রিয়তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তাদের ব্যবসায়। এবারের ঈদে কোরবানি দাতার সংখ্যাও কমবে। ফলে কামারদের তৈরি পণ্যও কম বিক্রির শঙ্কায় তারা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কর্মকার দোকান ঘুরে দেখা যায়, আকার অনুযায়ী বিভিন্ন ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। চাপাতি বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। পশু জবাইয়ের পর চামড়া ছাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে তৈরি ছুরি বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৫০, ৬০, ৮০ থেকে ১২০ ও দেড়শ টাকায়। চাকু বিক্রি হচ্ছে সাইজ অনুযায়ী ১৫০-২০০ টাকায়। ভালো বটি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকায়।
রাজধানীর খিলগাঁও, কারওয়ান বাজার, মুহাম্মদপুর, মুগদা ও মান্ডাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোর সামনে সাজানো ছুরি-চাপাতি, দা-বটি। ক্রেতারা আসছেন। কেউ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পছন্দসই কোরবানির পশুর মাংস কাটার সরঞ্জাম। শুধু যে নতুন দা-বটি কেনার জন্যই লোকজন কামারের দোকানে আসেন তা নয়, জং ধরা পুরোনো দা-বটি শান দিতেও আসছে অনেকে।
দা-বটি শান করাতে আসা ওয়াসেক বিল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিজের ঘরে জিনিসপত্র আছে, তাই শান দিতে আসলাম। জিনিসের দাম জানতে চেয়েছিলাম। দেখে-শুনে মনে হলো- দাম বেশি বাড়েনি। শান দিতেও আগের মতোই টাকা নিচ্ছে।’
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. হারুনুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে অর্ডার বেড়েছে। দিনরাত কাজ করছি। সারা বছরই দা-বটি ও কোদাল তৈরি করি। কিন্তু কোরবানির ঈদে ছুরি-চাকু, চাপাতির চাহিদা তুলনামূলক একটু বেশি। নতুন বিক্রির পাশাপাশি পুরোনো ছুরি-চাকু শান দিচ্ছি।
তিনি বলেন, স্প্রিং ও জাহাজের লোহা দিয়ে এসব জিনিসপত্র বানানো হয়। তবে স্প্রিংয়ের দা ও চাপাতির দাম বেশি। এক কেজি ওজনের চাপাতি বিক্রি করছি ৭০০ টাকা, স্প্রিংয়ের চাপাতি দু-তিনশ বেশি নিচ্ছি। ছুরি ৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়, গরু জবাইয়ের বড় ছুরি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং বটি আকারভেদে ১০০ থেকে ১০০০ টাকা বিক্রি করছি।
ভোলা কর্মশালের দোকানে বসা মো. ইসমাইল জাগো নিউজকে বলেন, করোনা আর লকডাউনের কারণে বিক্রি ভালো হচ্ছে না। যেখানে প্রতি বছর ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ, সিলেট, কুষ্টিয়া, ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানদাররা এসে ছুরি আর চাপাতি নিতো। আমরা হাজার হাজার ছুরি আর চাপাতি পাইকারি বিক্রি করি। গতবারও বিক্রি করতে পেরেছিলাম। কিন্তু এবারও কড়া লকডাউনের কারণে ঢাকার বাইরের কোনো কাস্টমার আসেনি।
তিনি বলেন, গত বারের চেয়ে এবার জিনিসপত্রের দাম খুব একটা বেশি বাড়েনি। তবে লোহার দামটা একটু বেশি। আর বিদেশি বটি, ছুরি-চাপাতির কারণে ব্যবসা কম। তবে দু-একদিন পর বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছি।
এফএইচ/এএএইচ/জিকেএস