মিনিটে শনাক্ত ৭, ঘণ্টায় মৃত্যুও ৭
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে প্রতি মিনিটে শনাক্ত ৭ এবং ঘণ্টায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৫ জুলাই) একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক ৯ হাজার ৯৬৪ শনাক্ত ও ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়। সে হিসাবে প্রতি মিনিটে ৭ শনাক্ত ও প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৭ জনের মৃত্যু হয়।
আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া যায়। করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডের এদিনে দেশের আট বিভাগে করোনা শনাক্তে সর্বমোট ৩৪ হাজার ২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সময়ে সারা দেশে করোনারোগী শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ আর একক বিভাগ হিসেবে বরিশালে এদিন রোগী শনাক্তের হার ৪৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
আর এদিন সর্বোচ্চ ৫৫ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয় খুলনা বিভাগে। মাসখানেক আগেও সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যানে ঢাকা ও চট্গ্রাম বিভাগ এগিয়ে থাকলেও গত বেশ কিছুদিন যাবত করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু হচ্ছে খুলনা বিভাগে। বয়সের হিসেবে সর্বোচ্চ ৮৩ জনের মৃত্যু হয় ষাটোর্ধ্ব বয়সী প্রবীণের।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তুলে ধরতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শে ২৮ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সীমিত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে লকডাউন ও পরবর্তীতে প্রথমে ১ জুলাই ও পরবর্তীতে আজ ৫ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের নির্দেশনা জারি করেছে।
করোনা নিয়ন্ত্রণে সারা দেশের সকল প্রকার গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সকল ধরনের পরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। জন ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই থেকে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমেছে। সারা দেশে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে।
বাংলাদেশে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটিতে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট, যাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করছে, তা বেশ অনেকটাই ছড়িয়ে পড়েছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি ও দেশি আই এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরীক্ষিত নমুনার মধ্যে চার পঞ্চমাংশই করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট।
আইইডিসিআর জানায়, গত ১৬ মে পর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে করোনাভাইরাসের ৫০টি নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে এবং ফলাফল হিসেবে নমুনার ৮০ শতাংশের মধ্যেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত ও ১৮ মার্চ প্রথম রোগীর মৃত্যুর পর প্রতিদিন স্বল্প সংখ্যক মৃত্যুর খবর শুনলেই মানুষ আতঁকে উঠত। কিন্তু পরবর্তীতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। মন্ত্রী, সাংসদ, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মীসহ ধনী দরিদ্র্র নির্বিশেষে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
৫ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ৬৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬২টি নমুনা পরীক্ষায় করে ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৯১৭ জন করোনারোগী শনাক্ত ও ১৫ হাজার ২২৯ জন রোগীর মৃত্যু হয়। মোট মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ১০ হাজার ৭৮৫ জন পুরুষ (৭০ দশমিক ৮২ শতাংশ) ও নারী ৪ হাজার ৪৪৪ জন (২৯ দশমিক ১৮ শতাংশ) দাঁড়িয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের কোভিশিল্ড টিকা প্রদান করা হয়। প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন ও দ্বিতীয় ডোজের ৪২ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ জন।
বর্তমানে ফাইজার ও চীনের সিনোফার্মের টিকাদান কার্যক্রম চলছে। করোনার চিকিৎসা সারা দেশে ডেডিকেটিভ হাসপাতালে ১৪ হাজার ৫৮৮টি সাধারণবেড ও এক হাজার ২০৩টি আইসিইউ বেড, ২৮ হাজার ৩৪৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ১ হাজার ৫৮৬টি হাইফ্লু নাজেল ক্যানুলা এবং ১ হাজার ৭২১টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর প্রস্তুুত রাখা হয়েছে।
কিন্তু এত প্রস্তুুতির পরও শংকা কাটছে না। স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোরভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে না চললে রোগীর সংখ্যা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়বে। উন্নত বিশ্বেও করোনার উচ্চসংক্রমণকালে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ভেঙ্গে পড়তে দেখা গেছে।
বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য ও করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ১০০ ভাগ মানুষকে মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পারলে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। নতুবা পরিস্থিতি আরও খারাপের আশঙ্কা তার।
এমইউ/এমআরএম