করোনায় ফুরফুরে মেজাজে দিন কাটাচ্ছে জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রাণীরা
ভালো আছে জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রাণীকুল। দর্শনার্থীর প্রবেশ বন্ধ থাকায় নিজেদের মতো করে নেচে-খেলে ও খেয়ে দিন পার করছে তারা। এতে করে অনেক প্রাণীর পরিবারে নতুন সদস্য আসতে যাচ্ছে। তবে জাতীয় চিড়িয়াখানার ইমেজ নষ্ট করতে একটি মহল নানা মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।
রোববার (২৭ জুন) মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চিড়িয়াখানায় নয়টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ চারটি, চিতাবাঘ একটি, মেছোবাঘ পাঁচটি, হায়না তিনটি, ভাল্লুক পাঁচটি এবং ১৩টি শেয়ালসহ মাংসাশী প্রাণীগুলো মোটাতাজা হয়ে উঠছে। আগে এখানে প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে ১০ থেকে ৫০ হাজার দর্শনার্থীর আগমন হতো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এখন চিড়িয়াখানার মধ্যে এক ধরনের বন্যপ্রাণী উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। প্রাণীগুলো নিজেদের মতো করে দিন পার করছে। এতে করে আগের চেয়ে আরও সতেজ হয়ে উঠছে তারা।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি গ্রুপে জাতীয় চিড়িয়াখানার মাংসাশী প্রাণীগুলো না খেয়ে মরে যাওয়ার পথে এমন কয়েকটি ছবি পোস্ট করা হয়। সেটি ভাইরাল হওয়ায় অনেক মানুষ তা দেখে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে ভর্ৎসনা ও হতাশামূলক মন্তব্য করেছেন। আসলে এসব ছবি জাতীয় চিড়িয়াখানা বা রংপুরের সরকারি চিড়িয়াখানার কোনো প্রাণীর নয় বলে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ রোববার জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত দুই মাস আগে “আমরা মিরপুরের পোলাপাইন” নামে ফেসবুকের একটি পেজে ক্ষুধার্ত কয়েকটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও সিংহের ছবি পোস্ট করা হয়। এটি নিয়ে আমাদের কাছে অনেকে খোঁজ-খবর নিয়ে জানার চেষ্টাও করে। আসলে এগুলো আমাদের দেশের সরকারি কোনো চিড়িয়াখানার প্রাণীর ছবি নয়। আমাদের সকল প্রাণীকুল অনেক ভালো রয়েছে। তারা নিজেদের মতো করে হেসে-খেলে দিন পার করছে।’
তিনি বলেন, একটি মহল এসব ছবি পোস্ট করে জাতীয় চিড়িয়াখানার ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’ যারা এ ধরনের অভিযোগ করছেন জাতীয় চিড়িয়াখানা চালু হলে তাদের দেখে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, ‘বর্তমানে চিড়িয়াখানার সকল প্রাণীরা সতেজ ও ফুরফুরে মেজাজে দিন পার করছে। যে সকল মাংসাশী প্রাণী যেমন- বাঘ, সিংহ, চিতাবাঘ, ভাল্লুক, মেছোবাঘ, খেঁক শিয়ালের করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাদের শেডগুলোর চারপাশে প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে দুইবার অ্যান্টি করোনা স্প্রে দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পরে কর্মচারীরা এসব শেডে কাজ করছে।’
এছাড়া জাতীয় চিড়িয়াখানার ৬০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তথ্য মতে, ১৮৬ একর জায়গা নিয়ে গঠিত দেশের সবচাইতে বড় চিড়িয়াখানা এটি। এখানে ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো দর্শনার্থী আসেন। চিড়িয়াখানায় রয়েছে মাংসাশী ১১ প্রজাতির ৩৭টি প্রাণী, ১৯ প্রজাতির বৃহৎ প্রাণী (তৃণভোজী) ২৭১টি, ১৮ প্রজাতির ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী ১৯৮টি।
এছাড়া রয়েছে ১০ প্রজাতি সরীসৃপ ৭২টি, ৫৬ প্রজাতির ১২৬২টি পাখি, অ্যাকুরিয়ামে রক্ষিত মৎস্য প্রজাতিসমূহ ২৯ প্রজাতির ৯২৮টি প্রাণী। সব মিলিয়ে রয়েছে ১৩৭টি পশু-পাখির খাঁচা। রয়েছে দুটি নয়নাভিরাম বৃহৎ লেক। সেখানে প্রচুর পরিমাণে দেশি মাছ চাষ করা হয়। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার পরিবারে নতুন সদস্য আসছে বলেও জানা গেছে।
এমএইচএম/এমআরআর/এমএস