এক মিনিটে টিকাগ্রহণ, ব্যবস্থাপনা নিয়ে খুশি চীনা নাগরিকরা
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এসে গাড়ি থেকে নামেন একজন চীনা নাগরিক। চীনা ভাষায় হাসপাতালের দেয়াল লিখন পড়ে সামনে এগিয়ে ধীরে ধীরে ডিসইনফেকশন টানেলে প্রবেশ করে আন্ডারগ্রাউন্ডে নেমে যান। সেখানে গিয়ে স্বদেশি একজনের কাছ থেকে ফরম নিয়ে দ্রুত ফিলআপ করে স্বেচ্ছাসেবকের কাছে দেখান তিনি। তালিকায় টিক চিহ্ন দিয়ে তাকে টিকা নেয়ার জন্য ভেতরে পাঠানো হয়। এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে টিকা নিয়ে বেরিয়ে আসেন ওই ভদ্রলোক।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, এক মিনিটেরও কম সময়ে টিকা নিতে পেরে তিনি খুবই খুশি। বারবার বলতে থাকলেন- টিকাদান কেন্দ্রের সার্বিক ব্যবস্থাপনা খুবই সুন্দর ও গোছালো। আরও কয়েকজন চীনা নাগরিককে দ্রুততম সময়ে টিকা নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) করোনার টিকাদান কেন্দ্রে রোববার (৩০ মে) মধ্য দুপুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
ঢামেক হাসপাতালসহ রাজধানীর চারটি সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে চীনের সিনোফার্মের টিকাদান কার্যক্রম চলছে। গত ২৫ মে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঢামেকে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। চীনের তৈরি এই টিকা সর্বপ্রথম নেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী অনন্যা সালাম সমতা। এদিন ১৭১ জন শিক্ষার্থী টিকা নেন। ঢামেক ছাড়াও মুগদা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের এ টিকা দেয়া হচ্ছে।
শনিবার (২৮ মে) থেকে ঢামেক হাসপাতালে চীনা নাগরিকরা টিকা নিচ্ছেন। প্রথম দিন ২২০ জন নাগরিক টিকা নিয়েছেন। ঢামেক হাসপাতাল টিকাদান কেন্দ্রের ফোকাল পারসন ডা. গোলাম রাব্বানি জানান, পরীক্ষামূলক টিকাদান কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ৪৫৬ জন চীনা নাগরিককে টিকাদানের জন্য এই কেন্দ্রে তালিকা পাঠিয়েছে চীনা দূতাবাস। তাদের দেয়া তালিকা অনুসারে ওয়েবসাইটে দেয়া ফরম পূরণ করে টিকা নিচ্ছেন তালিকাভুক্ত বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষ।
এসময় তিনি আরও জানান, ভারতের অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক ভায়াল টিকায় ১০ জনকে টিকা দেয়া হলেও চীনের সিনোফার্মের এক ভায়াল টিকায় মাত্র একজনকেই টিকাদান করা যায়।
ডা. রাব্বানি আরও জানান, চীনের সিনোফোর্মের টিকাদানের পাশাপাশি ভারতের অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ঢামেক হাসপাতালের এ টিকাদান কেন্দ্রে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ২৮ হাজার মানুষ। ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় ডোজের ২৪ হাজার মানুষ টিকা গ্রহণ করেছেন। আরও দুই হাজার ডোজ তাদের কাছে মজুত রয়েছে।
তিনি বলেন, অনেকেই কেন্দ্র পরিবর্তনের সুযোগে অন্যে কেন্দ্র থেকে টিকা গ্রহণ করে থাকতে পারেন। সে হিসাবে এ কেন্দ্রে নেয়া সবাই টিকা পেয়ে গেছেন বা যাবেন বলে মনে করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে চীনের সিনোফার্মের টিকা পরীক্ষামূলকভাবে দুই হাজার জনকে দেয়া হবে। তাদের মধ্যে মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিটউট, ইনস্টিটিটউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী চীনা নাগরিক এবং চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। যারা টিকা গ্রহণ করবেন তারা সাত থেকে দশ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে থাকবেন। সিনোফার্মের টিকার কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কি-না তা দেখার পর নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমইউ/এআরএ/এমএস