পর্যায়ক্রমে কলকারখানা খোলার পরামর্শ জাতীয় পরামর্শক কমিটির
ঈদের পরে পর্যায়ক্রমে কলকারখানা খোলার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা’র সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ৩৪তম সভায় এ পরামর্শ দেয়া হয়।
সভায় বলা হয়, ঈদ পূর্ববর্তী যাতায়াত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। ঈদের পরে মানুষ ফিরে এলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে। পর্যায়ক্রমে কলকারখানা খোলা হলে জনসাধারণকেও একযোগে ঢাকায় ফিরতে হবে না।
তারা বলেন, সরকার আরও এক সপ্তাহের জন্য বিধিনিষেধ বাড়িয়েছে। কমিটি বিধিনিষেধ প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ঘোষিত বিধিনিষেধের কঠোর বাস্তবায়নের সুপারিশ করে। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন এবং অংশীজনের সহযোগিতা কার্যক্রমে অংশগ্রহণও বিশেষ প্রয়োজন বলে কমিটির সদস্যরা মনে করেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম আলমগীর স্বাক্ষরিত ই-মেইল বার্তায় সভায় অন্যান্য যেসব বিষয়ে আলোচনা ও সুপারিশ করা হয় সেগুলো হলো-
১. জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির দুইজন সদস্য জাতীয় অধ্যাপক নির্বাচিত হয়েছেন। কমিটির সকল সদস্য অধ্যাপক আজাদ খান অধ্যাপক ও মাহমুদ হাসানকে অভিনন্দন জানান এবং তাদেরকে সম্মাননা দেয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
২. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতালির করোনা রোগীর পোস্টমর্টেম সংক্রান্ত একটি তথ্যসহ বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর প্রচারণা নিয়ে আলোচনা হয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের উদ্ধৃতি দিয়ে এবং বিভিন্ন ভুল তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেখা যায়। মহামারির সময় এই ধরনের তথ্য জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে এবং তা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে বলে কমিটি মত দেয়। জাতীয় কমিটি এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ দেয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে কোনো প্রচারণায় না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
৩. ভারত থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়। ১৪ দিন পর পিসিআর পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলেই কেবলমাত্র ছাড়পত্র দেয়া নিশ্চিত করতে হবে বলে কমিটি মনে করে। এছাড়াও সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনানুষ্ঠানিক যাতায়াত কঠোরভাবে বন্ধ করার অনুরোধ করা হয়। ভারতে সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চলাচল বন্ধ অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেয়া হয়।
৪. হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে জাতীয় কমিটি। কমিটি এসব পদক্ষেপের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করে। সকল জেলা হাসপাতালে সরকারের অক্সিজেন জেনারেটর স্থাপনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানো হয়। এছাড়াও অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর সিলিন্ডার পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়। মারাত্মক রোগের চিকিৎসার জন্য ভেন্টিলেটর ছাড়াও বাইপ্যাপ, সিপ্যাপ ও হাইফ্লো অক্সিজেন ক্যানুলাসহ জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সংযোজন করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়।
৫. স্বল্পমূল্যে মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সরবরাহের উদ্দেশ্যে বুয়েটের একটি গবেষক দলের প্রতি অভিনন্দন জানানো হয়। এ কার্যক্রমে সরকার পৃষ্ঠপোষকতার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন এটি দেশের জন্য আশাব্যঞ্জক খবর এবং এর সফল বাস্তবায়ন পরনির্ভরশীলতা কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করা হয় সভায়।
৬. সভায় শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলের দেশে আসা এবং খেলার বিষয়ে আলোচনা হয়। অনুশীলন ও খেলা চলাকালে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পরামর্শ দেয়া হয়।
৭. বৈশ্বিক সংকট এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক ও সক্রিয়ভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এবং বিকল্প অনুসন্ধান করছে। প্রথম ডোজের ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ ভেতরে দ্বিতীয় টিকা নেয়া যায়, কোনো কোনো দেশ ১৬ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রদান করছে।
এ ব্যাপারে সবাইকে ধৈর্যশীল হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কাউকে এ ব্যাপারে টিকা পরিস্থিতি ও সরকারের বিকল্প পরিকল্পনা জনগণকে অবহিত করার ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। টিকার জন্য পরনির্ভরশীলতা কমাতে উৎপাদনের জন্য দ্রুত সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন বলে সভায় মতামত দেয়া হয়।
৮. সংক্রমণ শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক করোনা পরীক্ষা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয় সভায়।
এমইউ/এআরএ/এএসএম