বিধিনিষেধেও রাজধানীতে তীব্র যানজট
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ দু’দফা শেষে তৃতীয় দফা চলছে। বিধিনিষেধের শুরুর দিকে জনসমাগম ও গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশের যে সরব ভূমিকা ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা নিষ্প্রভ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, তৃতীয় দফায় লকডাউনে রাজধানীতে তীব্র যানজটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া মানুষদের। কোথাও কোথাও যানজটের কারণে ১৫-২০ মিনিটের মত আটকে থাকতেও হয়েছে।
এদিকে, চেকপোস্টগুলোতে শুরুর দিকে পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো হলেও এখন তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। আর কোথাও কোথাও তো চেকপোস্টই গায়েব হয়ে গেছে। ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে বিধিনিষেধের শুরুতে যে কড়াকড়ি ছিল, তা এখন আলোচনা থেকে বহু দূরে। এখন ‘মুভমেন্ট পাস’ চেক করতে দেখা যাচ্ছে না পুলিশকে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখনও চলছে মুভমেন্ট পাস চেকিং হচ্ছে। কিন্তু পিক-আওয়ারে সব গাড়িকে একসঙ্গে ধরে চেক করা সম্ভব হচ্ছে না।
শপিং মল ও দোকানপাট খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একপ্রকার হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। কেউ নিজস্ব গাড়ি হাঁকিয়ে যাচ্ছেন মার্কেটে। কেউ যাচ্ছেন অটোরিকশা বা রিকশায়। এদিকে ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে চলাফেরার কথা থাকলেও তা নিয়ে এখন আর বালাই নেই।
শনিবার (১ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, টিকাটুলি মোড়, গুলিস্তান, জিপিও মোড়, পল্টন মোড়, কাকরাইল, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, নতুনবাজার, নিউ মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। ধানমণ্ডি-২৭ থেকে নিউ মার্কেট সড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
দুপুর ১২টায় সায়েন্সল্যাব মোডে দেখা গেছে, যানবাহনের বেশ চাপ। সেখানে কথা হয় নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, দেশে লকডাউন চলছে, এটা সরকার বলছে। কিন্তু কাজকর্মে কিন্তু তা বোঝা যাচ্ছে না। সীমিত বলেন আর বৃহৎ বলেন, অফিস বাদে সবকিছুই এখন খোলা। বিশেষ করে রমজান মাস হওয়ায় মানুষ এসব বিধিনিষেধ মানতে নারাজ।
সায়েন্সল্যাব মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শাহীন উদ্দিন জানান, সকাল ১০টার পর থেকে গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে বেলা গড়াতে থাকলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রতি সিগন্যালে প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মত সময় লাগছে।
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ফকির আলমগীর জাগো নিউজকে বলেন, গত কয়েকদিনের চাইতে আজ কিছুটা বেশি বিক্রি হচ্ছে। মার্কেটে ক্রেতাও আসছে আশানুরূপ। তবে বাস চলাচল করলে আরও বেশি ক্রেতা আসতে পারত। সকাল থেকেই দেখছি জ্যাম দেখা যাচ্ছে রাস্তায়।
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে দেখা যায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ধানমন্ডি-৩২ থেকে কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, লকডাউন বাস্তবায়নে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কমেছে। শুরুর দিকে যেভাবে পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল, তা এখন নেই বললেই চলে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন বাস্তবায়নে নগরের প্রধান প্রধান সড়কে নেই আগের মতো চেকপোস্ট। সড়কে পুলিশের অবস্থান থাকলেও এখন গাড়ি চলাচলে সেভাবে জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে না।
শাহবাগ, নিউমার্কেট, বাড্ডা, তেজগাঁও, কাওরানবাজার, নতুন বাজার, প্রগতি সরণি এলাকায় তেমনভাবে চেকপোস্ট চোখে পড়েনি। বিধিনিষেধের আওতামুক্ত পরিবহন ও ব্যক্তি ছাড়া অন্যদেরও সেভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জেরার মুখে পড়তে হয়নি।
গণপরিবহন ছাড়া অন্যান্য পরিবহন অনেকটা স্বাভাবিকভাবে চলেছে। কয়েকটি স্থানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে পুলিশকে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ চলবে আগামী ৫ মে পর্যন্ত।
টিটি/এএএইচ/এএসএম