ব্র্যাকে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু শনিবার
করোনাভাইরাস পরীক্ষার দ্রুত ফলাফল প্রদানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অ্যান্টিজেন টেস্ট কার্যক্রম শুরু করছে ব্র্যাক। শনিবার (২৪ এপ্রিল) থেকে ঢাকায় ১৫টি এবং চট্টগ্রামে একটি বুথ নিয়ে সর্বমোট ১৬টি বুথের মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।
সপ্তাহে শনি থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে এবং প্রতিটি বুথে প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি করে নমুনা পরীক্ষা করবে ব্র্যাক।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ মিডিয়া ম্যানেজার মাহবুবুল আলম কবীরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্র্যাক ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বুথের (কিওস্ক) মাধ্যমে আরটি-পিসিআর টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে আসছে। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হতে যাচ্ছে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই কার্যক্রম বিস্তারের পরিকল্পনা করেছে ব্র্যাক। পর্যায়ক্রমে ঢাকায় সর্বমোট ৩২টি এবং চট্টগ্রামে চারটি বুথের মাধ্যমে অধিক সংক্রমণ এলাকায় কার্যক্রমটি বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে আরটি-পিসিআর টেস্ট পদ্ধতিতে করোনাভাইরাসের বেশিরভাগ নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ফল পেতে অন্তত ২৪ ঘণ্টা কিংবা তার বেশি সময় লাগে। কিন্তু অ্যান্টিজেন টেস্টে নমুনা সংগ্রহের পর অল্প সময়েই মধ্যেই পরীক্ষার ফলাফল জানা যায়। অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষায় সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট যা চলমান সরকারের করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে বলে আশা করছে ব্র্যাক।
ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নমুনা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে সহায়তা করতে সারাদেশে বর্তমানে ৪১টি বুথে নমুনা সংগ্রহ করছে ব্র্যাক যার নমুনা আরটি-পিসিআর পদ্ধতির মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর ফলাফল প্রদান করা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি বুথে শুধুমাত্র বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রস্তুত হতে কিছুটা সময় পেলেও দ্বিতীয় ধাক্কাটা এসেছে খুব দ্রুতগতিতে। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণের হার কমিয়ে রাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের করোনাভাইরাস পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের আলাদা করে আইসোলেশনে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমি আশা করছি, র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে আসা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য একটি ভূমিকা পালন করবে, যাতে করে খুব দ্রুত রোগ শনাক্ত করা যাবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থাপনা দেয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, এই কার্যক্রমের সুফল দেশের সব সংক্রমণপ্রবণ অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে হবে আর এর জন্য প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। বর্তমানে ব্র্যাক এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরকে সহায়তা করছে যুক্তরাজ্য সরকারের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও)।
কারা, কীভাবে পাবেন এই সুবিধা
নিবন্ধিত চিকিৎসকের পরামর্শে, অথবা করোনাভাইরাসের উপসর্গ, যেমন- জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে, এমন ব্যক্তি বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা যে কেউ নমুনা জমা দিতে পারবেন ব্র্যাকের বুথের মাধ্যমে।
অনলাইনে আবেদনের পরে বুথে উপস্থিত হলে ব্র্যাক কর্মী রোগীর লক্ষণ এবং রোগের ইতিহাস জেনে কোন পদ্ধতিতে (অ্যান্টিজেন পদ্ধতি অথবা আরটি-পিসিআর) করোনা পরীক্ষা করা হবে তা নির্ধারণ করবেন। সাধারণত উপসর্গ থাকলে অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হবে এবং পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হলে ৩০ মিনিটের মধ্যে জানিয়ে দেয়া হবে। পজিটিভ ফলাফল ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে।
তবে উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও কারও টেস্টের ফল যদি নেগেটিভ হয় তাহলে পুনরায় তার নমুনাটি আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হবে (নমুনা একবারই নেয়া হবে)। ব্র্যাকের বুথের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষার জন্য অবশ্যই প্রত্যেক সেবাগ্রহীতাকে অনলাইনে coronatest.brac.net এই লিংকে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে এবং ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এ ‘বিল পে’ অপশন-এর মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত ১০০ টাকা ফি পরিশোধ করতে হবে। মোট সাতটি ধাপের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের নমুনা প্রদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন যেকোনো ব্যক্তি।
অনলাইনে আবেদনের সাতটি ধাপ:
১. অনলাইনে ব্র্যাকের ওয়েবসাইট coronatest.brac.net যেয়ে ‘আগামীকালের করোনা শনাক্তকরণ টেস্টের জন্য এখানে ক্লিক করুন’ ট্যাবে ক্লিক করতে হবে। তারপরের তিনটি প্রশ্ন পড়ে ‘হ্যাঁ’ তে ক্লিক করতে হবে। এভাবে প্রথম ধাপ সম্পন্ন হবে।
২. দ্বিতীয় ধাপে আপনার জেলা বা শহর নির্বাচন করতে হবে। তারপর আপনার জেলা বা শহরের সঙ্গে নিকটস্থ বুথ নির্বাচন করে নিতে হবে।
৩. তৃতীয় ধাপে ‘আমি সম্মত আছি এবং করোনা সংক্রান্ত টেস্ট করাতে চাই’ বাটনে ক্লিক করলেই একটি আবেদন ফর্ম চলে আসবে।
৪. মোবাইল নম্বর বা ই-মেইলসহ সকল তথ্য দিয়ে ফর্মটি পূরণ করলে, মোবাইলে একটি ভেরিফিকেশন কোড আসবে। তাই সঠিক মোবাইল নম্বরটি প্রদান করতে হবে। কোড নম্বরটি নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে ক্লিক করলেই আবেদন নিশ্চিত হবে।
৫. আবেদন সম্পন্ন করার জন্য নগদের অ্যাপের মাধ্যমে ‘বিল পে’ ট্যাবে ক্লিক করে ‘কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহের ফি’ সিলেক্ট করুন। তারপর ‘MOHFW Covid19 Test Booth’ বাটনে ক্লিক করে ১০০ টাকা প্রদান করতে হবে।
৬. টাকা পরিশোধের পর একটি ট্রানজেকশন নম্বর পাঠানো হবে। যারা অ্যাপ থেকে পরিশোধ করেছেন তারা অ্যাপের মাধ্যমে আর যারা সরাসরি নগদ থেকে করেছেন তারা এসএমএসের মাধ্যমে নম্বরটি পাবেন।
৭. শেষ ধাপে ওয়েবসাইটের নির্ধারিত ফর্মে ট্রানজেকশন নম্বরটি লিখে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। পরবর্তী এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন নিশ্চিত করা হবে।
নমুনা সংগ্রহের পর তা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্ধারিত ল্যাবে। পরীক্ষার ফলাফল যার যার ফোন নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হবে। উল্লেখ্য, এই টাকার কোনো অংশ ব্র্যাকের তহবিলে যায় না, বরং এর পুরো অংশই জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে সরাসরি সরকারি তহবিলে জমা হয়।
রিপোর্ট প্রদানের সময়:
অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে তার ফলাফল পজিটিভ হলে তা ৩০ মিনিটের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে এবং পজিটিভ ফলাফল ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে। তবে আরটি- পিসিআর পদ্ধতিতে সংগৃহীত নমুনা ব্র্যাক সংগ্রহের পরে স্বাস্থ্য অধিদফতর মনোনীত ল্যাবরেটরিতে হস্তান্তর করে। এ পদ্ধতিতে পরীক্ষাকৃত নমুনার ফলাফল কবে পাওয়া যাবে তা মনোনীত ল্যাবরেটরির সক্ষমতা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়। টেস্ট রিপোর্ট প্রাপ্তির সময় নির্ধারণ ব্র্যাকের আওতাভুক্ত নয়।
ব্র্যাকের বুথের অবস্থান:
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১০টি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নয়টি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন একটি বুথে অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে করোনার নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করবে ব্র্যাক।
এর মধ্যে ডিএনসিসির অধীনে মিরপুর ১৩ নম্বরের সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের আধুনিক মেডিকেল কলেজ, উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের উত্তরা হাইস্কুল, মগবাজারের মধুবাগে আসাদুজ্জামান খান কামাল কমিউনিটি সেন্টার, মিরপুর ১ নম্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন ১০ নম্বর ওয়ার্ডে কমিউনিটি সেন্টার, মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে চাঁদেরহাট ঈদ্গাহ মাঠ প্রাঙ্গণে, মিরপুর ১৪ নম্বরে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ এবং হাসপাতাল, আগারগাঁও শেরে বাংলা নগরে জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ফার্মগেটের তেজতুরি বাজারে আবদুল হালিম কমিউনিটি সেন্টার, এবং বনানীর ২২ নম্বর রোডে ১২ নম্বর বাড়িতে ইয়র্ক হাসপাতালে এই সেবা প্রদান করা হবে।
ডিএসসিসিতে নয়াপল্টনের পল্টন কমিউনিটি সেন্টার, বাসাবো কমিউনিটি সেন্টার, ওয়ারী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুরাতন ঢাকার জনসন রোডে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, এবং আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এই সেবা পাওয়া যাবে।
এছাড়া চট্টগ্রামে পাঁচলাইশ বিবিরহাটে ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে এই সেবা প্রদান করবে ব্র্যাক।
উল্লেখ্য, সরকারের করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রমে সাড়া দিয়ে গত বছর মার্চ মাসের ১১ তারিখ থেকে ব্র্যাক বুথের মাধ্যমে সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে আসছে যা হতে বর্তমানে ৪১টিতে সেবাদান কার্যক্রম চলমান আছে।
আইএইচআর/ এমআরআর/এএসএম