পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে চিকিৎসকের আচরণের প্রতিবাদ ওসিদের
রাজধানীর অ্যালিফ্যান্ট রোডে চিকিৎসক-নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশের বাগবিতণ্ডার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) রাতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডিএমপির বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলী ও যাত্রাবাড়ীর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজাহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, গত রোববার (১৮ এপ্রিল) নিউ মার্কেট থানাধীন অ্যালিফ্যান্ট রোডে সরকার ঘোষিত চলমার বিধিনিষেধে চলচাল নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের যৌথ অভিযান চলছিল। সেসময় প্রাইভেটকার আরোহী একজন নারী চিকিৎসককে থামিয়ে তার আইডি কার্ড দেখাতে বললে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। পরে তিনি নানা অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তার অবতারণা করেন এবং পুলিশের কাজে সহায়তা না করে বরং পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অসৌজন্যমূলক ও শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করায় বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গভীর ক্ষোভ ও প্রতিবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।
এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ঘোষিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকার বিভিন্ন সময় নির্দেশনা দিয়ে আসছে। চিকিৎসক, পুলিশসহ অন্যান্য পেশাজীবির অনেকেই কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ সকল কাজ করতে গিয়ে সম্মুখসারির যোদ্ধারা নিজেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এবং প্রাণ উৎসর্গ করছেন। সেই সঙ্গে প্রাণঘাতী এ রোগের জীবানুকে নিজ শরীরের মাধ্যমে বহনও করছেন বটে। তাই, সরকার আরোপিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকল পেশাজীবি, ব্যক্তি ও যানচলাচলের মুভমেন্ট পাস বা আইডি কার্ড সঙ্গে রাখা জরুরি মর্মে প্রজ্ঞাপন ও নোটিশ জারি করা হয়।
পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে নিউমার্কেট থানা পুলিশ গত রোববার একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অ্যালিফ্যান্ট রোড এলাকায় চেকপোস্টের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছিল। অন্যান্য দায়িত্বের পাশাপাশি আরোপিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে চলাচলকারী ব্যক্তিবর্গ যাতে অহেতুক বাইরে না বের হন বা বাড়ি থেকে বের হলে আইডি কার্ড বা মুভমেন্ট পাস দেখতে চাওয়া, নির্দেশনা মোতাবেক দোকান-পাট খোলা বা বন্ধ আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এ বিশেষ মুহূর্তে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
সেক্ষেত্রে জনগণ পুলিশকে সহযোগিতা করবে এটাই কাম্য। সরকারি আদেশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অ্যাপ্রেন পরা একজন নারী চিকিৎসকের পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের অনধিকারচর্চা বা হেনস্তার কিছু নয়। আইডি কার্ড দেখতে চাওয়ায় কর্তব্যরত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট যেভাবে ওই চিকিৎসকের হেনস্তার শিকার হন তা উপস্থিত জনতা এবং মিডিয়া কর্মীদের ধারণকৃত ভিডিওচিত্র বিভিন্ন ফেসবুক আইডিতে ভাইরাল হলে দেশের মানুষ তা দেখতে পাযন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে একজন চিকিৎসকের এহেন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পেশাজীবি শ্রেণীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর একটি অপচেষ্টা মাত্র। কিছু লোকের উশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে পেশার সবাই দায়ভার গ্রহণ করবে তা অ্যাসোসিয়েশন কখনও মনে করে না। দেশের সকল চিকিৎসকের প্রতি আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধ ও কৃতজ্ঞতা সর্বদা বিদ্যমান। ওই চিকিৎসকের সরকারি কাজে অসহযোগিতা প্রকাশ্যে গালিগালাজ, ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসৌজন্যমূলক আচরণে কর্তব্যরত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের নিজ নিজ ইউনিটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিএসএমএমইউয়ের একজন প্রত্যক্ষদর্শী ডাক্তার বিষয়টি সংক্রান্তে তাৎক্ষনিক ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের নিকট ওই ডাক্তারের অশোভন আচরণের জন্য ক্ষমা চান, তদুপরি, ঐ নারী চিকিৎসকের অন্যায়কে সায় দিয়ে কারো সাফাই গাওয়া দুঃখজনক।
এতে আরও বলা হয়, আমরা বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে সেদিনের আলোচিত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কর্মকাণ্ড নানাভাবে অবলোকন করে ডাক্তারের প্রতি পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেটের কোনো অসৌজন্যমূলক আচরণ দেখতে পাইনি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা না হলে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট বারবার লাঞ্ছিত হবে, কাজে উদ্যম হারিয়ে ফেলবে এবং অনেকে আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল হয়ে এরূপ কাজ করার সুযোগ গ্রহণ করবে।
‘ এ অবস্থায় যেহেতু বিষয়টি সংবেদনশীল, তাই রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পেশাজীবি শ্রেণীকে মুখোমুখি দাঁড় বা একে অপরের প্রতি ক্ষোভ বা দূরত্ব সৃষ্টি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে দায়ি ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।’
টিটি/ইএ/এমকেএইচ