মহামারিতে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসছেন যারা
দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে লকডাউনে বন্দি সারাদেশ। কাজ হারিয়ে নিম্ন আয়ের লোকজন ও ছিন্নমূল মানুষ যখন অসহায় অবস্থায় দিনপাত করছে তখন তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে কিছু সংগঠন। কেউ দিচ্ছে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা, কেউবা ইফতার ও সাহরি। পুরো মাসের বাজার করে দিচ্ছে কোনো কোনো সংগঠন। ঈদে অসহায় মানুষদের মুখে হাসি ফোটাতে সংগঠনগুলো নিয়েছে বিশেষ পদক্ষেপ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিপদে সবাই যদি যার যার জায়গা থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে করোনাকে যেমন জয় করা যাবে, তেমনি অনাহারে মারা যাবে না কেউ।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন
চলতি বছর ফের করোনা বাড়লে হাসপাতালগুলোর আইসিইউ, সিট হয়ে ওঠে সোনার হরিণ। এমন অবস্থায় এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামের করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতাল চালু করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। যেখানে চিকিৎসা, ওষুধ এমনকি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সবই মিলছে বিনামূল্যে। এছাড়া ছিন্নমূল ও দুস্থ মানুষের মাঝে ইফতার ও সাহরি বিতরণ করছে বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকরা। করোনায় মানুষের সেবা করতে গিয়ে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাসসহ ছয় স্বেচ্ছাসেবক।
বরাবরের মতো মানুষের পাশে বিদ্যানন্দ
এ প্রসঙ্গে সংগঠনের হেড অব ইমেজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন সালমান খান ইয়াসিন জাগো নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সংস্থাটি মানবকল্যাণে কাজ করছে। চট্টগ্রামে কোভিড আক্রান্ত গরিব ও দুস্থ মানুষদের জন্য গড়ে তুলেছে সিএমপি বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতাল।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও হাসপাতালটাকে চালু রাখছি। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় আমরা সাহরি-ইফতার বিতরণ করছি। এছাড়া কোনো করোনা আক্রান্ত ফ্যামিলির খোঁজ পেলে তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করছি।’
সঙ্গে আছি ফাউন্ডেশন
গত বছর করোনার সময় ছিন্নমূল মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করে আলোচনায় আসে ‘সঙ্গে আছি’ নামের একটি সংগঠন। চলতি বছরও তাদের খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ প্রসঙ্গে ‘সঙ্গে আছির’ সাধারণ সম্পাদক পিআইবির সহকারী প্রশিক্ষক বারেক কায়সার জাগো নিউজকে বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে আমাদের খাবার বিতরণ অব্যাহত আছে। আমরা পথশিশুদের খাবার দিচ্ছি। একদিন ফল দিচ্ছি তো আরেক দিন অন্যকিছু দিচ্ছি।
সঙ্গে আছি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ
তিনি বলেন, ঈদে ছিন্নমূল ও অসচ্ছল মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। ৫ হাজার মানুষের ঘরে সেমাই, চিনি, চাল ইত্যাদি পৌঁছে দেয়ার একটা পরিকল্পনা আমাদের আছে।
ডু সামথিং ফাউন্ডেশন
গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের সংগঠন ডু সামথিং ফাউন্ডেশন। ২০১৬ সালে থেকে আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ডা. নাজমুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের ২৮টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী যখন আমাদের ফোন দিচ্ছে, আমরা তার বাসায় অক্সিজেন সিলিনন্ডার পৌঁছে দিচ্ছি। আমাদের হটলাইন নম্বর আছে। সেখানে যখন রোগীরা কল দেয় তখন আমরা তাদেরকে এই অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করছি। অক্সিজেন দেয়ার পর তাদের মনিটরিং করি ভিডিও কলে। রোগীর অবস্থা যদি বেশি খারাপের দিকে যায় তাহলে তাদের হাসপাতালে চলে যেতে বলি, বা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করি।
তিনি বলেন, রমজান মাসে আমরা প্রায় ৮০০ পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছি। তাদের পুরো রোজার মাসে বাজার করে দিচ্ছি। এই বাজারের মধ্যে চাল, ডাল, লবণ, পেঁয়াজ সবকিছু আছে। যাতে এই মাসে তাদের কোনোকিছু কিনতে না হয়। সাভার, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পাবনা এই জেলাগুলোতে একটা তালিকা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। এর বাইরেও আমরা বিভিন্ন যায়গায় খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। কেউ যদি আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেসেজ দেয় বা নক করে বলে, আমাদের বাসায় বাজার নাই, তখন আমরা বাজার করে দেয়ার চেষ্টা করি।
এই চিকিৎসক আরও জানান, বিভিন্ন জায়গায় ইফতার প্রজেক্ট চলছে। সিরাজগঞ্জের একটা মাদরাসার ১০০ জনকে প্রতিদিন ইফতার করাচ্ছি। কুড়িগ্রামের আরও একটা মাদরাসায় ১২৩ জনকে নিয়মিত ইফতার করাচ্ছি। আর ঈদে ইচ্ছা আছে অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করবো।
এসএম/এসএইচএস/এএসএম