ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

নজিরবিহীন সংকট : ঢাকার রোগীদের জন্য আইসিইউ ফাঁকা একটি

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল | প্রকাশিত: ০৮:১৬ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২১

করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বেড়েই চলেছে। গত কয়েকদিন যাবত করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষায় প্রতিদিন গড়ে সাত হাজারেরও বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এসব রোগীর মধ্যে যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগ, ক্যান্সার ও কিডনিজটিলতাসহ একাধিক রোগব্যাধি রয়েছে তাদের একটা অংশের জন্য আইসিইউতে চিকিৎসা অত্যবশ্যক হলে বেডের অভাবে তাদের চিকিৎসা প্রদান করা যাচ্ছে না। ফলে আইসিইউয়ের একটি বেডের জন্য মুমূর্ষু রোগীর স্বজনরা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে হন্যে হয়ে ঘুরছেন কিন্তু কোথাও ভর্তি করাতে পারছেন না। ফলে আইসিইউতে চিকিৎসার অভাবে প্রতিদিনই করোনা রোগীর মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দুই কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত মেগাসিটিখ্যাত রাজধানী ঢাকায় মুমূর্ষু করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) মাত্র একটি বেড ফাঁকা রয়েছে। সরকার ১০টি সরকারি হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করেছে। এ ১০টি হাসপাতালে সর্বমোট আইসিইউ বেডের সংখ্যা ১৩২টি। এর মধ্যে মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৩১টি বেডে রোগী ভর্তি রয়েছেন। শতাংশের হিসাবে ৯৯ দশমিক ২৪ শতাংশ আইসিইউ বেড করোনা রোগীতে পরিপূর্ণ। ফলে বেড ফাঁকা না থাকায় চাইলেই মুমূর্ষু কোনো করোনা রোগীকে ভর্তি করা সম্ভব হবে না।

শুধু সরকারি হাসপাতালেই নয়, করোনো ডেডিকেটেড ৯টি বেসরকারি হাসপাতালে তথৈবচ দশা। নয়টি বেসরকারি করোনা হাসপাতালে সর্বমোট আইসিইউ বেডের সংখ্যা ৩১৩টি। আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত রোগী রয়েছেন ৩০৬টি বেডে। অর্থাৎ প্রায় ৯৮ শতাংশ বেড রোগীতে পরিপূর্ণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি ও বেসরকারি উভয় সেক্টরে আইসিইউ বেডের এমন সংকট ইতোপূর্বে তারা দেখেননি। তারা বলেন, অনেকে করোনাকে সাধারণ ব্যাধি মনে করে সার্বক্ষণিক মুখে মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। কিন্তু তারা জানেন না যে এ ব্যাধিটি প্রাণঘাতিও বটে। বিশেষ করে যারা মাল্টিপল ডিজিজে (একাধিক রোগব্যাধি রয়েছে এমন রোগী) আক্রান্ত, তারা করোনায় আক্রান্ত হলে আইসিইউ সাপোর্ট লাগে। কিন্তু বেড খালি না থাকায় অনেক ভর্তিযোগ্য রোগীকে অন্যভাবে চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানোর প্রেচেষ্টা চলছে। ভাগ্য ভাল হলে বাঁচছে, নতুবা উপযুক্ত চিকিৎসা ছাড়াই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ১০টি ডেডিকেটেড হাসপাতালের ১৩২টি শয্যার মধ্যে উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ১৬টি আইসিইউ শয্যার ১৬টিতে, ৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা হাসপাতালের ১০টি শয্যার ১০টিতে, ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৬টির মধ্যে ১৬টিতে, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ছয়টির ছয়টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০টি শয্যার ২০টিতে, মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ১৯টি শয্যার ১৯টি, শহীদ সোহরাওয়ার্দির ১০টির ১০টিতেই এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ২০টি শয্যার ২০টিতেই রোগী ভর্তি রয়েছেন। শুধুমাত্র রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫টির মধ্যে ১৪টিতে অর্থাৎ একটি বেড ফাঁকা রয়েছে।

শুধু আইসিইউ বেডই নয়, সাধারণ বেডও ক্রমেই দুর্লভ হয়ে উঠছে। মঙ্গলবারের পরিসংখ্যান মতে, সরকারি হাসপাতালে দুই হাজার ৬০৮টি সাধারণ শয্যায় এ মুহূর্তে রোগী ভর্তি দুই হাজার ১৬২জন। ভর্তিযোগ্য বেড ফাঁকা রয়েছে মাত্র ৪৪৬টি।

অন্যদিকে, বেসরকারি ১৬টিহাসপাতালে সর্বমোট ৩১৩টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ২৬টির ২০টিতে, আসগর আলী হাসপাতালে ১৮টির ১৮টিতে, স্কয়ার হাসপাতালের ১৯টির ১৯টিতে, ইবনে সিনা হাসপাতালের সাতটির সাতটিতে, ইউনাইটেড হাসপাতালের ২২টির ২২টিতে, এভার কেয়ার হাসপাতালের ২১টির ২০টিতে, ইমপালস হাসপাতালের ৫৪টির ৫৪টিতে, এ এম জেড হাসপাতালের ১০টির ১০টিতে, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের নয়টির নয়টিতেই, জাপান ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৭টির ১৭টিতেই, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ১৫টির ১৫টিতে, গ্রিণ লাইফ হাসপাতালের ১৭টির ১৭টিতেই, ল্যাবএইড হাসপাতালের আটটির আটটিতেই, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪৭টির ৪৭টিতেই, জয়নুল হক শিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪টির ১৪টিতেই, কেরানীগঞ্জের সাজিদা হাসপাতালের ছয়টির ছয়টিতেই এবং গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের তিনটির তিনটিতেই করোনা রোগী চিকিৎসাধীন।

এছাড়া রাজধানীর বেসরকারি ১৬টি হাসপাতালে এক হাজার ৫৬৮টি সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছেন এক হাজার ৩৮৭টিতে।

এমইউ/ইএ/এমকেএইচ