ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

শারীরিক সম্পর্কে জোর করায় গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১:৫৯ এএম, ০৮ এপ্রিল ২০২১

খালেক প্রামাণিক (৫৫)। পেশায় একজন দিনমজুর। কাজের সন্ধানে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার নিজ জেলা রাজবাড়ী থেকে আসেন মানিকগঞ্জে। আব্দুল লতিফ নামে একজন মানিকগঞ্জের লেবার মার্কেট থেকে কাজের জন্য কিনে আনেন দুজনকে। এর মধ্যে- খালেক প্রামাণিক (৫৫) ও আরেকজন আব্দুল হালিম (২২)।

আব্দুল হালিমের বাড়ি নাটোর জেলায়। তিনিও কাজের সন্ধানে মানিকগঞ্জ এসেছিলেন। কিন্তু এর আগে তাদের মধ্যে পরিচয় ছিল না। কাজের জন্য দুজন আব্দুল লতিফের বাড়িতে রাতের খাবার খেয়ে দু’জন একসঙ্গে ঘুমাতে যান। এক পর্যায়ে হালিমকে শারীরিক সম্পর্কের আহ্বান জানান খালেক। শুরুর দিকে সাড়াও দেয় হালিম।

কিন্তু গত ৮ মার্চ হালিম বেঁকে বসলে খেপে যান খালেক। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এক পর্যায়ে গামছা পেঁচিয়ে খালেককে শ্বাসরোধে হত্যা করে হালিম।
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে গ্রেফতার হন হালিম।

বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সকালে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পিবিআই বলছে, রাজবাড়ীর খালেক প্রামাণিক ও নাটোরের আব্দুল হালিম পরস্পরের অপরিচিত ছিলেন। গত ৫ মার্চ আব্দুল লতিফের বাসায় আসেন খালেক ও হালিম। ৫-৭ মার্চ তিন রাত তারা দু’জন এক বিছানাতেই রাত কাটান। ৮ মার্চ দিনমজুর খালেকের মরদেহ গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। খালেক প্রামাণিকের ছেলে সিরাজুল ইসলাম মিরাজ মামলাটি করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলার তদন্ত করে পিবিআই মানিকগঞ্জ জেলা। ছায়া তদন্তের অংশ হিসেবে পিবিআই মানিকগঞ্জ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তথ্য সংগ্রহ করেন।

পিবিআই মানিকগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘটনার পর থেকেই নিহত খালেক প্রামাণিকের সহকর্মী দিনমজুর আব্দুল হালিম পলাতক ছিলেন। খালেক প্রামাণিকের মোবাইল নম্বরও ছিল না। খালেকের সহযোগীর নাম ঠিকানা যোগাযোগের কোনো ফোন নম্বরও কারো জানা ছিল না। শুধুমাত্র পলাতক ব্যক্তির দৈহিক বর্ণনা পাওয়া যায় এবং খাবার খাওয়ার আগে ‘কাহী ভাত দেন’ এই ভাষায় কথা বলতেন তিনি।

গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে হালিমকে শনাক্ত করে পিবিআই মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নাটোরের সিংড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার পর থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে। পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), সিআইডি ও র্যাব ছায়া তদন্ত করে। পরবর্তীতে পিবিআই মানিকগঞ্জ ছায়া তদন্ত করে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনসহ একমাত্র আসামি আব্দুল হালিমকে গ্রেফতার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে হালিম পিবিআইকে জানায়, ৪ মার্চ মানিকগঞ্জের বাসস্ট্যান্ডে দিনমজুর খালেক প্রামাণিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে দুজনেই শ্রমিক হিসেবে আব্দুল লতিফের বাড়িতে অবস্থান নেন। গভীর রাতে খালেক প্রামাণিকের ইঙ্গিতে হালিমের সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক হয়। এভাবে চলে তিন রাত। ৭ মার্চ রাতে হালিম প্রকৃতির ডাকে বাইরে বের হলে খালেক তাকে আহ্বান জানায়। কিন্তু এবার আর সায় দেয়নি হালিম। এ নিয়ে ঘরের বাইরেই খালেকের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে খালেকের গলায় দড়ি পেঁচিয়ে তাকে ফেলে দেয় হালিম। পরে টেনে হিঁচড়ে শোওয়ার ঘরে নিয়ে আসে। এরপর খালেকের পরনের গামছা তার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খালেককে হত্যা করেন হালিম। এরপর নিজের কাপড় ও প্রামাণিকের মোবাইলসহ পালিয়ে যান তিনি।

পিবিআই মানিকগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হালিমের কাছে থেকে নিহত খালেক প্রামাণিকের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু ছিল না। গ্রেফতারের পর আসামি হালিমের বরাত দিয়ে পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যানুযায়ী সমকামী সম্পর্কের দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভ থেকেই দু’জনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে খালেককে হত্যা করেন হালিম।

টিটি/এআরএ/এএসএম