ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

‘আমাগো মতো বুড়াগোর জন্যও কি কোনো ব্যবস্থা নাই?’

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৭:৫০ পিএম, ০৬ এপ্রিল ২০২১

রাজধানীর শাহবাগের বেতার ভবনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ফিভার ক্লিনিকের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে ধপাস করে মাটিতে বসে পড়লেন বয়োবৃদ্ধ এক প্রবীণ। গেটের পাশে এভাবে তাকে বসে থাকতে দেখে নিরাপত্তারক্ষীদের একজন দৌড়ে এসে বললেন, ‘মুরুব্বি এখানে বসা যাবে না, উঠেন, উঠেন, এটা বসার জায়গা না।’

বৃদ্ধের শরীর ঘামছে, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস ঠানামা করছে। তবুও ক্ষীণ স্বরে নিরাপত্তারক্ষীকে বললেন, ‘বাবারে ডাক্তার সাবরে এতো অনুরোধ করলাম অসুস্থ স্ত্রীর করোনা টেস্ট করার সুযোগ করে দিতে, কিন্তু তিনি সরাসরি না করলেন। কাগজে হাসপাতালের ওয়েবসাইটের ঠিকানা লিখে দিয়ে নিবন্ধন করে আসতে বললেন।’

বৃদ্ধ অস্ফুট স্বরে বললেন, ‘আমার তো দামি মোবাইল নাই, কমদামী বটম মোবাইল। এটাতে তো ইন্টারনেট চলে না, তাহলে কেমন কি করমু। আমাগো মতো বুড়াগোর জন্যও কি কোন ব্যবস্থা নাই।’

test

মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টায় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে।

কৌতুহলবশত বৃদ্ধের সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা ৭৫ বছর বয়সী আবদুল বাতেন সরদার জানান, তার স্ত্রী দীর্ঘদিন মস্তিষ্কের পারকিনসনন্স নামক রোগে আক্রান্ত। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সাবেক এই কর্মচারী প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদের অধীনে স্ত্রীর চিকিৎসা করান। সম্প্রতি স্ত্রীর অসুস্থতা বেড়ে গেলে তিনি ইস্কাটনে দীন মোহাম্মদের প্রাইভেট হাসপাতালে ফলোআপ চিকিৎসার জন্য যান। সেখান থেকে তাকে বলা হয় করোনার কারণে দীন মোহাম্মদ সরাসরি রোগী দেখেন না। ছয় হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে একদিন ভর্তি থাকলে তিনি টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসা দেন।

একদিনে ছয় হাজার টাকা ডাক্তার দেখানোর খরচের কথা ভেবে তিনি সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভিজিট দিয়ে আরেক নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. বদরুল আলমকে দেখান। তিনি তার স্ত্রীর মাথার একটি সিটি স্ক্যান করাতে লিখে দেন।

test

মঙ্গলবার কাকডাকা ভোরে উঠে বিএসএমএমইউয়ের আউটডোরে টাকা জমা দিয়ে সিটি স্ক্যান করাতে গিয়ে শুনেন করোনার টেস্ট ছাড়া সিটি স্ক্যান করা যাবে না। অনেক অনুরোধ করেও সিটি স্ক্যান করাতে পারেননি তিনি। সেখান থেকে তাকে ফিভার ক্লিনিকে পাঠানো হয়।

এখানে এসে প্রথমেই গেটে নিরাপত্তারক্ষীর বাধার সম্মুখীন হন। নিবন্ধন না করানোয় তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিতে চায়নি। পরে স্ত্রীর সমস্যার কথা জানিয়ে নিরাপত্তারক্ষীকে অনুরোধ করে চিকিৎসকের কাছে যান। সেখানেও একই কথা নিবন্ধন না করে কেন এলেন-এ কথা শুনে ফিরে আসেন।

test

গরমে দৌড়ঝাঁপ করে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। নিরাপত্তারক্ষী গেটের পাশে বসতে না দেয়ায় সেখান থেকে উঠে ধীরে সামনে এগুতে থাকেন। কোথায় যাচ্ছেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এখান থেকে ঢামেক হাসপাতালে যাবেন। সেখানে গিয়ে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা না করাতে পারলে এলিফ্যান্ট রোডে মেয়ের বাসায় চলে যাবেন।

বয়োবৃদ্ধ এ প্রবীণ যাওয়ার সময় গণমাধ্যম পরিচয় পেয়ে বলেন, ‘আমাদের মতো সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য কি করোনা টেস্টের একটু সহজ ব্যবস্থার কথা কাউকে বলা যায় না?’

এমইউ/জেডএইচ/এমএস