ঝিমিয়ে পড়া নাট্যাঙ্গনকে চাঙ্গা করতে পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন
নাটক হচ্ছে সুস্থ ধারার সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিনোদনের শক্তিশালী এ মাধ্যমটি যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না। ঝিমিয়ে পড়ছে সংস্কৃতি অঙ্গন। সর্বশেষ মহামারি করোনাভাইরাস নাট্যঙ্গনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমরা নাট্যকর্মীরা এখান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছি। সেজন্য সরকার এবং নাট্যামোদি ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। এভাবে নাটক নিয়ে কথা বলেছেন ময়মনসিংহের নাট্যজগতের অন্যতম ব্যক্তিত্ব শাহাদাত হোসেন খান হীলু।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রবেশ করলাম তখন প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। আমাদের আগে যারা প্রবেশ করেছেন বা যাদের দেখে আমরা নাট্যজগতে আসলাম তখন তাদের অনুসরণ করতাম। তারা যে সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করছেন তা দেখে মনে হতো তারা আমাদের সমাজের জন্য কাজ করছেন। সমাজের মধ্যে সবাই কিন্তু শিল্পী হয় না। কিছু কিছু মানুষ যাদের কমিটমেন্ট আছে তারা নাট্যাঙ্গনে কাজ করতে পেরেছেন।’
শাহাদাত হোসেন খান হীলু বলেন, ‘কেউ কেউ মনে করেন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সমাজকে পরিবর্তন করা সম্ভব। সেই থেকে আমাদের শিল্পাঙ্গনে প্রবেশ করা। এই জগতে প্রবেশ করার পর আমাদের একটা ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরাও যেন সমাজের জন্য কিছু করতে পারি। সেটা অবশ্যই নিজের দায়বদ্ধতা থেকে করতে হবে।’
এই আগ্রহ নিয়ে নাট্যজগতে প্রবেশ পরবর্তী সময়ে দেখলাম, দীর্ঘ সময় দিলাম। তখন বুঝতে পারলাম আমাদের আগে যারা প্রবেশ করেছেন। এই কাজ দিয়ে সমাজ পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছেন। নাট্যজগৎ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য চমৎকার প্লাটফর্ম। এখান থেকে মানুষ অনেক ভালো কথা বলে। আবার অনেকেই সে কথাগুলোকে ভালো কাজে ব্যবহার করেন। পরবর্তী সময়ে আমরা দেখি এটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়।
এ নাট্যজন বলেন, ‘এখন যারা কাজ করেন তাদের পাওয়ার ইচ্ছাটা অনেক বেশি। তারা সবসময় চিন্তা করেন আমার এই পেতে হবে, সেই পেতে হবে। খুব সহজেই কীভাবে জনপ্রিয় হওয়া যায় বা ভালো একটা অবস্থান নেয়া যায়। এ ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। এ ভুলের কারণে তারা বেশি দিন নাট্যজগতে স্থায়ী থাকতে পারেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কথা শিল্পের চর্চা যদি আমাদের ভিতরে না থাকে, আমরা যদি ভিতরে তা লালন করতে না পারি তাহলে শিল্পের বিকাশ ঘটবে না। এটাই হচ্ছে সবচাইতে বড় কথা। নাটকে কাজ করে আমি যদি শিল্পের বিকাশ না ঘটাই। সমাজের জন্য কাজ করতে পারি। তাহলে এই কাজের কোন মূল্যায়ন নাই।’
একজন নাট্যকর্মই বা সমাজের মানুষ হিসেবেই হোক শিকড়ের খোঁজ নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি আমি শিকড়ের খোঁজ করতে পারি তাহলেই আমার বাংলাদেশের চেতনা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সারা পৃথিবীতে মূল্যায়িত হয়। সেই বিষয়গুলো আমরা যদি খেয়াল না করি তাহলে শিল্প-সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘নাটক শিল্প টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব সরকারের আছে। স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের আলাদা কোনো ব্যবস্থা করে নাটক, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়। তাহলে হয়তো আমরা সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারব।’
শাহাদাত হোসেন খান হীলু ময়মনসিংহ বহুরূপী নাট্য সংগঠনের সচিব ও নাট্য নির্দেশক। তিনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ময়মনসিংহ থিয়েটার এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক।
মঞ্জুরুল ইসলাম/আরএইচ/এমকেএইচ