অবশেষে খুললো বইমেলার দুয়ার
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবার অমর একুশে বইমেলা আয়োজন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে হয় কর্তৃপক্ষের। এবার আদৌ বইমেলা হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন লেখক-প্রকাশক ও বইপ্রেমীরা। একটা সময় ভার্চুয়ালি বইমেলা আয়োজনের কথা ওঠে। পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি চত্বরে বইমেলা আয়োজনের অনুমতি পায় বাংলা একাডেমি। তবে সিদ্ধান্ত হয়, মেলা পিছিয়ে মার্চে হবে। অবশেষে দুয়ার খুললো প্রতীক্ষিত বইমেলার।
বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলার’ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’র ইংরেজি অনুবাদের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি। এছাড়া ১০ জন সাহিত্যিককে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও দেয়া হয়।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি : পিআইডি
বইমেলা উদ্বোধনকালে নতুন প্রজন্মকে বই পড়ার অভ্যাস বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছোটদের বইয়ের প্রতি ঝোঁক বাড়ানো দরকার। আমাদের সময় বাচ্চাদের বই পড়ে শোনানো হতো। এখনও আমরা তা করি। সব সময় ঘরে একটা ছোট লাইব্রেরি করে রাখি। বইয়ের প্রতি ঝোঁক বাড়াতে হবে। পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আমাদের বক্তৃতা বিবৃতিতে মানুষের কাছে যত দ্রুত পৌঁছা যায়, সাহিত্যে আরও আগে পৌঁছা যায়। সাহিত্যের মাধ্যমে ইতিহাস, ভাষা-সংস্কৃতিও জানা যায়।’
প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে বইমেলা। ছবি : মাহবুব আলম
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই বছরে এবারের বইমেলা মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। মেলার মূল ভাবনা ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ভাষা শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। এ সময় সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি সচিব মো. বদরুল আরেফীন এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
এবারে বইমেলার পরিসর আরও বেড়েছে। ছবি : মাহবুব আলম
উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে বইমেলা ঘুরে দেখেন অতিথিরা। এর কিছুক্ষণ পরই সাধারণ দর্শনার্থী, লেখক ও পাঠকদের জন্য খুলে দেয়া হয় বইমেলার দুয়ার।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবারে বইমেলার পরিসর আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বইয়ের স্টল নিয়ে বসা প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা। প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গায় এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি ইউনিসহ মোট ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের বইমেলা। ছবি : মাহবুব আলম
মেলায় থাকছে ৩৩টি প্যাভিলিয়ন। লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে। সেখানে ১৩৫টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি ৫টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৪০টি স্টল দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমিসহ মেলায় অংশ নেয়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বইয়ের এ উৎসবে বই বিক্রি করবে ২৫ শতাংশ ছাড়ে।
ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে বইমেলা। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা প্রাঙ্গণ। তবে শুক্রবার বেলা ১টা থেকে বেলা ৩টা এবং শনিবার বেলা ১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বইমেলা।
এমএসএইচ/জিকেএস