‘সবাইকে গ্রাম দেখাতে চেয়েছিলেন দাদাভাই, তার ইচ্ছা পূরণ হলো না’
দাদাভাইয়ের খুব ইচ্ছে ছিল ছেলে, ছেলের বউ, দুই নাতনি ও বেয়াই-বেয়াইনকে একসঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাবেন। কয়েকদিন গ্রামে থেকে পুকুরে মাছ ধরবেন, ক্ষেতের তাজা শাকসবজি ও গাছের তাজা পেয়ারা-বড়ইসহ বিভিন্ন ফলমূল খাওয়াবেন। আর সবাই মিলে গ্রামটা ঘুরে দেখবেন। সময় সুযোগ করে সবাই মিলে গ্রামে রওনা হওয়ায় বেশ হাসিখুশি ছিলেন তিনি। কিন্তু তার এই আশা শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়নি; আগুনে পুড়ে মারা গেছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের বেডে শুয়ে মতিঝিলের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা উজ্জ্বল মিয়ার ১০ বছর বয়সী মেয়ে তাহিয়া এভাবেই তার দাদা ভাইয়ের শখের কথা ও বাসে অগ্নিকাণ্ডের বর্ণনা দিচ্ছিল।
তাহিয়া জানায়, বাসচালকের ঠিক পেছনের আসন থেকে পর পর কয়েকটা সিটে তার দাদা-দাদি, নানা-নানি, দুই বোন ও বাবা-মা বসে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় চালককে বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়তে দেখে তাহিয়া। আগুন দেখে ভয়ে সেও জানালা দিয়ে লাফ দেয়।
বাসে অগ্নিকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছিল তাহিয়া
তাহিয়ার বেডের অদূরেই অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ তার ছয় বছর বয়সী ছোট বোন ও দাদি শুয়েছিলেন। তাহিয়ার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছিল। আর তার দাদি ব্যথা-যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। এ সময় তাহিয়া বার বার বলছিল, কেউ যেন তার দাদার মৃত্যুর কথা দাদিকে না জানায়।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে মতলবগামী মতলব এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস দাউদকান্দির গৌরিপুর বাসস্টেশন এলাকায় পৌঁছালে গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অন্তত ২৫ জন।
আগুনে দগ্ধ হয়েছে তাহিয়ার ছোটবোনও
এ ঘটনায় তাহিয়ার পরিবারের মোট আটজন অগ্নিদগ্ধ হয়। সবাই কমবেশি অগ্নিদগ্ধ হলেও মারা যান উজ্জ্বল মিয়ার বৃদ্ধ বাবা রফিকুল ইসলাম। অন্যরা সামান্য দগ্ধ হওয়ায় তাদেরকে হাসপাতাল থেকে শুক্রবার দুপুরে রিলিজ দেয়া হয়।
দাউদকান্দির গৌরিপুর বাসস্টেশন এলাকায় বৃহস্পতিবার বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক নজরুল ইসলাম জানান, বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোট ১৮ জন এখানে এসেছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ইতোমধ্যে ১৫ জনকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মাত্র তিনজন গোলাম হোসেন (৭৫), শামসুন্নাহার (৬৫) ও রোকসান আরা বেগম (৪৫) এখানে ভর্তি রয়েছেন। ওমর ফারুক (৫০) নামে একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। তাদের মধ্যে ৭৫ বছর বয়সী গোলাম হোসেন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তার শরীরের ৩১ শতাংশ পুড়ে গেছে।
এমইউ/এমএসএইচ/জেআইএম