লোকারণ্য কারওয়ান বাজার মাছের আড়ত, বালাই নেই স্বাস্থ্যবিধির
রাজধানীর ধানমন্ডির বাসিন্দা আতাহার হোসেন শুক্রবার ছুটির দিনে ভোরে ঘুম থেকে উঠে কারওয়ান বাজার মাছের আড়তে অপেক্ষাকৃত কম দামে মাছ কিনতে আসেন। করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুখে মাস্ক পরেন। কিন্তু বাজারে ঢুকে তিনি হতবাক। বাজারে শত শত মানুষের উপস্থিতি থাকলেও কারও মাঝে করোনা স্বাস্থ্যবিধি (মুখে মাস্ক ও শারীরিক দূরত্ব মেনে চলাসহ অন্যান্য সতর্কতা) মেনে চলার বালাই নেই!
বরং তার মুখে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাবস পরে মাছ দামাদামি করার সময় একজন বিক্রেতা টিপ্পনী কেটে বলে ওঠেন, ‘এইভাবে মুখ প্যাঁচাইয়া রাখলে কথাই তো বুঝি না? মুখ থাইক্যা মাস্কটা খোলেন।’
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আতাহার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মাছের বাজারে এসে মনে হচ্ছে দেশে করোনা নেই। সবাই করোনা পূর্বকালীন ফ্রি স্টাইলে চলাফেলা করছেন।’
দেশে গত কয়েকদিন ধরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাস আগে ১১ ফেব্রুয়ারি (২৪ ঘণ্টায়) করোনা আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪১৮ জন। নমুনা পরীক্ষার হিসেবে শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৬৫ শতাংশ। করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭১ জন। এক মাসের ব্যবধানে ১১ মার্চ (২৪ ঘণ্টায়) করোনা আক্রান্ত নতুন শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ৫২ জন। শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে রোগী শনাক্ত দ্বিগুণেরও বেশি।
স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে অনেকেই ভাবছেন করোনার ঝুঁকি কমে গেছে। আর তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে চরম উদাসীনতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে গত বছরের মতো সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
শুক্রবার (১২ মার্চ) ভোরে কারওয়ান বাজার মাছের আড়তে সরেজমিনে দেখা গেছে, চারদিকে হৈচৈ, চিৎকার চেঁচামেচি ও কোলাহল। এদিক-সেদিক ব্যস্ত হয়ে অসংখ্য মানুষের ছোটাছুটি। রাস্তার পাশে হাতুড়ি দিয়ে গুঁড়া করা হচ্ছে ১৫-২০ কেজি ওজনের বড় বড় বরফের টুকরো। বিক্রেতারা উচ্চস্বরে দাম হাঁকছেন। দামে বনিবনা হলে চলছে বেচাকেনা। ড্রামে-ডেকচিতে ও বস্তায় প্যাকেট ভরে ছুটছেন রাস্তায়। অপেক্ষমাণ রিকশা, ভ্যান ও পিকআপে তুলে ছুটছেন গন্তব্য। এখানকার শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা তো দূরের কথা একজন আরেকজনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে ছোটাছুটি করছেন।
হাবিবুল্লাহ নামের একজন আড়তদার খাতা হাতে দাঁড়িয়ে বিক্রিত মাছের হিসাব রাখছিলেন। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক আছে তবে এখন তা পকেটে। বাজারে এত মানুষের মধ্যে মাস্ক পরে থাকতে দমবন্ধ হয়ে আসে।’ তবে বাইরে বের হলে তিনি মাস্ক পরিধান করেন বলে জানান।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হাতেগোনা যে কয়েকজন মাস্ক পরেছেন তারা সঠিকভাবে তা পরেননি। মাস্ক মুখের নিচে থুঁতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন।
মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলমগীর হোসেন বলেন, যেখানে মানুষের সমাগম বেশি সেখানে সংক্রমণর ঝুঁকি বেশি থাকে।
তিনি করোনা সংক্রমণের হার কমাতে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান ও গণমাধ্যমকে এ ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।
এমইউ/বিএ/এমকেএইচ