ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর

প্রকাশিত: ০৭:০২ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০১৫

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর হয় বলে জাগো নিউজকে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলে তা নাকচ করা হয়। তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে। পুলিশ ও র‌্যাবের বেশ কয়েকটি গাড়ি নিরাপত্তার জন্য মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে পাঠানো হয়েছে।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের শাস্তি কার্যকর করা হলো।

কর্মকর্তাদের কারাগারে প্রবেশ
জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর উপলক্ষে শনিবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে পৃথকভাবে কারাগারে পবেশে করেন ম্যাজিস্ট্রেট তানভির আহমেদ ও মো. আশরাফ হোসেন। এর কিছুক্ষণ পর আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক কারাগারে প্রবেশ করেন।

এরপর একে একে ফাঁসির মঞ্চে প্রবেশ করেন সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির, জেলার নেসার আলম, অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কর্নেল ফজলুল কবির, ডেপুটি জেলার সর্বোত্তম দেওয়ান, একজন সিভিল সার্জন, একজন কারা চিকিৎসক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, একজন ফটোগ্রাফার ও জল্লাদ।

এছাড়া কারাগারের ভেতরে ছিলেন র্যাবের একজন প্রতিনিধি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের একজন প্রতিনিধি, পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রমুখ।

কারাগারে অ্যাম্বুলেন্স
মরদেহ বহন করে এমন চারটি ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স শনিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে প্রস্তুত রাখা হয়। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সসহ দুটি কফিন, গোলাপ জল, আতর ইত্যাদি জিনিষও প্রস্তুত রাখা হয় আগে থেকেই।

স্বজনদের সাক্ষাৎ
মুজাহিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে শনিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে কারাগারের ভেতর প্রবেশ করেন তার স্বজনরা। কারাগারে ঢোকেন মুজাহিদের স্ত্রী, দুই ছেলে, ছেলের বউ, নাতি ও এক ভাই। পরে তারা ১২টা ১৫ মিনিটে কারাগার থেকে বের হন। এর আগে কারা কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে শেষ সাক্ষাত করতে রাত ৯টা ৫ মিনিটে মুজাহিদের পরিবারের সদস্যরা কারাগারে পৌঁছান।

রিভিউ খারিজের পর
রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের করা আবেদন গত বুধবার খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এরপর নানা নাটকীয়তার পর শনিবার বিকেলে প্রাণভিক্ষার অাবেদন করেন মুজাহিদ। রাত ৮টার দিকে প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ নাকচ করে দেন। এরপরই ফাঁসির বিষয়টি তরান্বিত হয়।

ফাঁসি কার্যকর করা জল্লাদরা
জল্লাদ শাজাহান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি দল মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করেন বলে জানা গেছে। দলের বাকি সদস্যরা হলেন রাজু, আবুল, হযরত, মাসুদ, ইকবাল ও মোক্তার। কাউকে ফাঁসি দিলে সেই জল্লাদ এক মাসের সাজা মওকুফ পান।

এর আগে শাজাহান ভূঁইয়া আলোচিত সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইকে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের ফাঁসি দিয়েছিলেন।

মুজাহিদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
আলী আহসান মুজাহিদের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, নিযার্তনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়।

প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রমাণিত ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, ১ ও ৫ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

মুজাহিদের বিরুদ্ধে ১ নম্বর অভিযোগকে ৬ নম্বর অভিযোগের সঙ্গে সমন্বিত করে দু’টি অভিযোগের একসঙ্গে রায় দেওয়া হয়। ১ নম্বর অভিযোগে ছিল, শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন হত্যা ও ৬ নম্বর অভিযোগে ছিল গণহত্যায় নেতৃত্ব দেয়া, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদির ঘটনা। প্রথম অভিযোগে শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হত্যার ঘটনায়ও তার সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায় ছিল বলে উল্লেখ করা হয় রায়ে।

৭ নম্বর অভিযোগে ছিল, ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যার ঘটনা। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এসব অভিযোগ প্রসিকিউশন সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

জেইউ/এআর/এফএইচ/একে/বিএ

আরও পড়ুন