ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সাকা যুগের অবসান হচ্ছে চট্টগ্রামে!

প্রকাশিত: ১২:৪১ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০১৫

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। যিনি সংক্ষেপে সাকা চৌধুরী নামেই পরিচিত। বর্তমানে তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাকা চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ রিভিউ আবেদনেও বহাল থাকে। সর্বশেষ আজ(শনিবার) তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন।

রাষ্ট্রপতি তার আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি পার পেতে পারেন, আর না করলে তার ফাঁসি কার্যকরে আর কোন বাধা থাকবে না। তবে চট্টগ্রামের অনেকেই মনে করছেন শেষ পর্যন্ত সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হবে এবং এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে সাকা যুগের অবসান ঘটবে।

তার ভয়ে সদা তটস্থ থাকতেন রাউজান, রাঙ্গুনিয়াসহ গোটা উত্তর চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। নিজেকে তিনি ভাবতেন ওই অঞ্চলের সামন্তু প্রভু হিসেবে।

তার আচার-আচরণে এমনই ভাব ছিল যেন তিনিই দণ্ডমুন্ডের কর্তা। তার হুকুম ছাড়া নড়তে পারতো না গাছের পাতা-ও। নিজস্ব বাহিনী গঠন করে তিনি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন চট্টগ্রামের তিনটি সংসদীয় আসন  রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়িতে।

তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, সন্ত্রাসী লালন-পালনের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি, সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করাসহ এরকম অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল আলম বেবি বলেন, সাকা চৌধুরী তার কর্মীদেরকে নিয়ে রাউজানে সন্ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করেছিলো। এখন তাদের দিন শেষ হয়ে গেছে। তাদের ভয়ে এতো দিন যারা রাজনীতিতে আসতে সাহস করতো না তারা এখন রাজনীতিতে যোগ দিবে।

সাকার ফাঁসির রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত রাউজানবাসীকে নিয়ে রায় বাস্তবায়নের জন্য রাস্তায় থাকবেন বলে জানান এ আওয়ামী লীগ নেতা। চট্টগ্রামের গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান বলেন, স্বাধানীতা পরবর্তী সময়ে সালাউদ্দিন কাদের ও তার দোসরারাসহ অনেক শক্তির উত্থান ঘটে যাদের নিয়ে সে স্বাধীনতা বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যায়।

এই বিচারের মাধ্যমে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরে হলেও গণজাগরণের আন্দোলনের জয় হয়েছে। বাঙ্গালী জাতি এরই মধ্যে দিয়ে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় থেকে মুক্তি পেয়েছে।

তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা ধ্বংস হবেই। কিন্তু স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে এ আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে নতুন করে যেন এরকম রাজনীতির উত্থান না হতে পারে সেই প্রস্তুতিও এখনই নিতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার গহিরা গ্রামে জন্ম নেয়া মুসলিম লীগ নেতা ফজুলল কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাজনীতিতে নিজস্ব একটা সংস্কৃতির বলয় তৈরি করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবুন্ধকে সপরিবারে হত্যার পর রাজনীতির পট পরিবর্তন হলে রাজনীতিতে স্বমূর্তিতে ফিরে আসেন।
 
তখন থেকে রাজনীতিতে দম্ভোক্তি, হাস্যরস ও অশ্লীল কটাক্ষের পাশাপাশি অঙ্গভঙ্গির নিজস্ব একটি স্টাইল তৈরি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এরপর ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় গ্রেফতার হন। তার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লেগেছে ৫ বছর সাড়ে ৭ মাস।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুর্নবাসিত হন  সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এ পর্যন্ত ছয়বার এমপি হয়েছেন। আর প্রতিবারই ভোটের সময় ভোটারদের বলেন দাপুটে আর অহমিকাময় উক্তি। আর সেই কুখ্যাত উক্তি হচ্ছে: ভোট পেয়ে গেছি, কেন্দ্রে যেতে হবে না।

১৯৭৯ থেকে নতুন করে রাজনীতিতে সক্রিয় হন সাকা চৌধুরী। বিএনপি, মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৬ বার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। আর প্রতিটি নির্বাচনের আগে বিশেষ করে সংখ্যালঘু ভোটারদের গিয়ে তার ক্যাডাররা ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার কথা বলতো।

১৯৮৫ সালে এরশাদের শাসনামলে মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পর দাপট আর ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে যান সাকা চৌধুরী। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি মন্ত্রীর পদমর্যাদায় হন প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা। পরবর্তীতে তিনি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামে তার ক্যডারদের হাতে খুন হয় প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের অর্ধ-শতাধিক নেতাকর্মী।

গত চারদলীয় জোট সরকারেরে আমলে তাকে ওআইসি’র মহাসচিব পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রার্থী করা হয়। এরকম কলঙ্কিত অতীতের একজনকে প্রার্থী করায় ঘরে বাইরে প্রবল সমালোচনা হয়। ২০০৪ সালের মহাসচিব নির্বাচনে তিনি পরাজিত হলে সংসদেও তীব্র সমালোচনা করে তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ।

বেফাঁস কথা বলা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্বভাব। সংসদ ও সংসদের বাইরে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বারবার আলোচনা এবং সমালোচনায় নিজেকে জড়িয়ে রাখতেন ।

জীবন মুছা/জেডএইচ/আরআইপি