অবশেষে পিছু হটলেন সাকা
অবশেষে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিতভাবে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী।
শনিবার আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, সাকা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি বরাবর লিখিতভাবে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। প্রাণভিক্ষার আবেদনের কপি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতাপশালী এ বিএনপি নেতা রাজনৈতিক ও পারিবারিক জীবনে অসংখ্য বার দাম্ভিকতার সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে নিজেকে মুক্ত ও নিরাপরাধ দাবি করে এসেছেন। রাজনৈতিক জীবনে সংসদে ও বাইরে বক্তব্যের মাধ্যমে সরকার, দল ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অনেক বিষোদগারকারী নেতাও তিনি।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সিনিয়র জেল সুপার ও জেলারসহ ৫/৭ জন সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন কি, না জানতে চেয়েছিলেন। সূত্র মতে তিনি বলেছিলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। তবে গত ২ দিনেও আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি তিনি।
এদিকে জেল কর্তৃপক্ষ বলেছেন, কারাবিধি অনুযায়ী সাকা ও মুজাহিদ কেউই আর আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন না। এ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেও ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি শুক্রবার জানাননি সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী।
তবে আজ শনিবার দুপুরের পর পরই কারাকর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানায়, সাকা ও মুজাহিদ দুজনই রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। পরে নিজ কার্যালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদনের কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বঙ্গভবনে পাঠানো হবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, প্রাণভিক্ষার আবেদনের কপি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।
রাজনৈতিক জীবনে অশ্লীল, আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য মুখাবয়বে তাচ্ছিল্য ও তীর্যক হাসি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য পরিচিতি লাভ করেন সাকা চৌধুরী।
যুদ্ধাপরাধের মামলার শুনানিতে আদালতে দাঁড়িয়েও বিভিন্ন সময়ে অশ্লীল, ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেন ছয়বারের এই সংসদ সদস্য, যা মামলার রায়েও উঠে এসেছে।
মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন সারাদেশে সাকা চৌধুরী নামেই বেশি পরিচিত। রাজনৈতিক জীবনে কয়েকটি দল ঘুরে সর্বশেষ তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছেন।
তবে দলের প্রধান খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করে দলের ভেতরেই সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
তারেকের কর্মকাণ্ডে খালেদার নীরব সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে সাকা বলেছিলেন, ‘আগে কুকুর লেজ নাড়াত, এখন লেজ কুকুরকে নাড়ায়।’
আবার বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে ‘তালাকপ্রাপ্ত বউয়ের ঘর করি না আমি’-মন্তব্য করেও দলে তোপের মুখে পড়েন সাকা চৌধুরী।
তার অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও।
২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলায় নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, ‘আমি গ্রেনেড মারলে সেটাতো মিস হত না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ট যোগাযোগের কথা দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেছিলেন, ‘ছাত্রজীবনে শেখ মুজিব আমার বাবার শিষ্য ছিলেন।’
আওয়ামী লীগের একটি মহল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাকে উস্কে দিচ্ছে অভিযোগ করে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, ‘ওই মহলটি জানে না যে তারা যে বিলের মাছ, আমি সালাউদ্দিন ওই বিলের বক।”
গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ওআইসি-এর মহাসচিব পদে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রার্থী করা হয়। এর সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
জবাবে সাকা বলেন, ‘বাবু ওআইসি নিয়ে কথা বলার কে? উনাকে ওআইসি নিয়ে কথা বলতে হলে, আমি ছোট বেলায় যে জিনিসটা কেটে ফেলে দিয়েছি, আগে ওই জিনিসটা কেটে ফেলতে হবে। তারপর বাবুকে ওআইসি নিয়ে কথা বলতে বলেন।’
নারী নির্যাতন বিষয়ে তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সাকা চৌধুরী বলেছিলেন, ‘তিনি কেরানীগঞ্জের একজন প্রমোদ বালক- এটা কি আমি কখনও বলেছি?’
নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘নেই’ উল্লেখ করেন সাকা চৌধুরী। অসত্য তথ্য দেয়ায় নির্বাচনী আইন অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ খারিজের উদ্যোগ নেয় বিগত নির্বাচন কমিশন। ওই সময় নির্বাচন কমিশনকে ‘গমচোর’ বলে আখ্যা দেন তিনি।
জেইউ/একে/এমএএস/আরআইপি