ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

‘আফ্রিকা-ব্রাজিল ফেরতদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:২১ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

করোনাভাইরাসের আফ্রিকা, ব্রাজিলের নতুন স্ট্রেইন বা বৈশিষ্ট্য ব্রিটেন, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বে করোনা প্রতিরোধী যে টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে, তা করোনার নতুন স্ট্রেইন থেকে সুরক্ষা দেবে না। চীনের উহানে যে বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস ধরা পড়েছিল, সেটা থেকে বর্তমান টিকা সুরক্ষা দেবে। তাই আফ্রিকা, ব্রাজিলসহ নতুন স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়া দেশগুলো থেকে আসা ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইন রাখা বা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

শুক্রবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাগো নিউজের সঙ্গে আলোচনায় এসব কথা বলেন সার্স ভাইরাসের কিট উদ্ভাবক ও করোনাভাইরাস শনাক্তের ‘জি র্যাপিড ডট ব্লট’ কিট উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীল।

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের যেসব মিউটেশন হচ্ছে, বিশেষ করে আফ্রিকান মিউটেশন খুব মারাত্মক। আফ্রিকা ও ব্রাজিলের মিউটেশন ভারতের পাঁচটা প্রদেশে দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। আফ্রিকান ভাইরাস থেকে কিন্তু এই টিকা সুরক্ষা দেয় না। তাই আফ্রিকা থেকে যেসব লোক দেশে আসবে তাদেরকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন বা টেস্ট করাতে হবে। তাদেরকে কমপক্ষে তিন দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।’

বাংলাদেশে যে টিকার প্রয়োগ করা হচ্ছে তা কেন নতুন স্ট্রেইন থেকে সুরক্ষা দেবে না জানতে চাইলে ড. বিজন বলেন, ‘কারণ হলো ভাইরাসটির মিউটেশন হয়েছে। এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে যত ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে, সবগুলোরই একই মূলমন্ত্র; সেটা হলো- স্পাইক প্রোটিন। চীনের উহানে প্রথম যেটা ধরা পড়েছিল, টিকাটা সেই ভাইরাসের জন্য। স্পাইক প্রোটিন দিয়ে তো ভাইরাস মানুষের কোষের ভেতরে প্রবেশ করে। আফ্রিকান স্ট্রেইনে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ যে অংশ দিয়ে কোষের ভেতর ভাইরাস প্রবেশ করে, সেই জায়গায় একটা পরিবর্তন হয়েছে। যে টিকা এখন দেয়া হচ্ছে, তা উহান স্ট্রেইনকে ফলো করে তৈরি করা হচ্ছে, তা ওর ভেতরে ছিল না। ফলে আফ্রিকান স্ট্রেইন ইমিউন সিস্টেমকে (করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা) অতিক্রম করতে পারে। মানে ওইটুকু আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম জানে না বা শেখেনি।’

বিষয়টি পরিষ্কার করতে পৌরাণিক কাহিনীর উদাহরণ দিয়ে ড. বিজন বলেন, ‘একটা গল্প আছে। অভিমন্যু যখন সুভদ্রার গর্ভে ছিল, তখন চক্রব্যূহ ভেদ করে ভেতরে প্রবেশের গল্প অর্জুন বলছিল তার মাকে। চক্রব্যূহ ভেদ করে ঢোকার গল্প বলা পর্যন্ত সুভদ্রা জাগ্রত ছিল। তারপর সুভদ্রা ঘুমিয়ে পড়েছে, অভিমন্যুও ঘুমিয়ে পড়ে তার মায়ের গর্ভে। তাই চক্রব্যূহ ভেদ করে বের হওয়ার গল্প যখন বলেছে অর্জুন, তা তারা শুনেনি। যার জন্য মহাভারতে যুদ্ধের সময় দ্রোচার্য যখন চক্রব্যূহ তৈরি করল, তখন তো অর্জুন ছাড়া সেটা মোকাবিলা করার বিষয় কেউ জানতো না। অর্জুন অন্যদিকে যুদ্ধ করছিল, তখন অভিমন্যু বলেছিল, আমি ঢুকতে পারবো কিন্তু বের হতে পারবো না। সে চক্রব্যূহ ভেদ করে ঢুকে পড়েছিল, তবে বের হতে পারেনি। আমাদের ইমিউন সিস্টেমেরও ওই অবস্থা। আমাদের আফ্রিকান ইমিউন সিস্টেমের যে পরিবর্তন হচ্ছে, এটা আমাদের ইমিউন সেলের জানা নাই বা যে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে তাতে সেই ইনফরমেশন বা কোডটা নাই। সেই দিক থেকে ভাইরাসটা ইমিউন সিস্টেমের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে বেরিয়ে যাচ্ছে।’

আফ্রিকান স্ট্রেইন প্রায় ৫০ শতাংশ ইমিউন সিস্টেমকে ভেঙে দিতে পারে বলেও মনে করেন প্রখ্যাত এ অণুজীব বিজ্ঞানী। ড. বিজন বলেন, ‘নতুনভাবে আফ্রিকান স্ট্রেইনের বিপরীতে টিকা তৈরি হচ্ছে। যত রকম মিউটেশন হয়েছে ব্রাজিলে, ব্রিটেনে, আফ্রিকাতে এগুলোকে সন্নিবেশিত করে নতুন টিকা আসছে খুব শিগগিরই। বিশ্বের বৃহৎ কোম্পানি তা আনার চেষ্টা করছে।’

‘হয়তোবা তৃতীয় ডোজে গিয়ে নতুন টিকা দেয়া শুরু করবে আর কি। চলমান টিকায় ইমিউন সিস্টেম কিছুটা হলেও শক্তিশালী হচ্ছে। এতে যদি ৫০ শতাংশও সুরক্ষা দেয় এবং হাসপাতালে যাওয়াটা কমে গেল। অন্ততপক্ষে কিছুটা জানল ইমিউন সিস্টেম, বাকিটা পরে কাভার করা যাবে’, যোগ করেন ড. বিজন।

পিডি/এআরএ/এমকেএইচ