ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

দেশে মানা হচ্ছে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা

প্রকাশিত: ০১:১৩ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৫

আজিমপুর পিলখানা রোডের একটি ওষুধের ফার্মেসিতে আনুমানিক দশ বছরের একটি ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক ভদ্রলোক। ফার্মেসির তরুণ কর্মচারী থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মেপে দেখছেন।

ভদ্রলোক জানালেন, ছেলেটির দুদিন যাবত জ্বর, সুস্থ হচ্ছে না। ফার্মেসির কর্মচারী প্যাকেট খুলে দুটি ক্যাপসুল দিয়ে বললেন, হাই অ্যান্টিবায়োটিক দিলাম, প্রতিদিন ১টা করে খাওয়াবেন। দুদিনে জ্বর ভাল না হলে টাকা ফেরত নিয়ে যাবেন। ভদ্রলোক ৭০ টাকা পরিশোধ করে দ্রুত স্থান প্রস্থান করলেন। ফার্মেসিতে এ ধরনের দৃশ্য হরহামেশাই চোখে পড়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) নীতিমালা ও নির্দেশনা অনুসারে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি করা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ হলেও রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ অবাধে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এক সময়ের কার্যকর বহু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে সোমবার থেকে বিশ্ব অ্যান্টিবায়োটিক সচেতনতা (১৬-২২ নভেম্বর) সপ্তাহ শুরু হয়েছে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের নির্বিচার বিক্রি ও অবাধ ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি হলেও বিশ্ব অ্যান্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহে সরকারি কোনো প্রচার প্রচারণা নেই।  

গত সেপ্টেম্বর মাসে তিমুর লেস্তের (পূর্ব তিমুর) রাজধানী দিলিতে ৬৮তম বার্ষিক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. পুণম ক্ষেত্র পাল বলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ১১টি দেশের অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এ অবস্থাকে ‘অ্যান্টিবায়োটিক পূর্ব যুগ’-এর সঙ্গে তুলনা করে জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, রেজিস্টার্ড ও পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীর উপদেশ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত নয়। রোগী সুস্থবোধ করলেও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ফুল কোর্স শেষ করা উচিত। মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করা অনুচিত। অন্যজনের জন্য প্রেসক্রাইবড ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের সংক্রমণরোধে নিয়মিত হাত ধৌত করা, অসুস্থ রোগীর সংস্পর্শে না আসা ও নিয়মিত টিকা গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তা অনুসরণ করা হচ্ছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুসারে বর্তমানে দেশে বৈধ লাইসেন্সধারী ওষুধের ফার্মেসির সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার ১৯৪টি।

ওষুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞদের মতে, সারাদেশে বৈধ ফার্মেসির সমপরিমাণ অবৈধ ফার্মেসির দোকান রয়েছে। আদর্শিকভাবে এ সব ফার্মেসিতে ওষুধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রয়েছে এমন গ্রাজুয়েট বা ন্যুনতম ডিপ্লোমা কোর্সধারী ফার্মাসিস্ট থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ ফার্মেসি আনাড়ি নামসর্বস্ব ফার্মাসিস্টদের দিয়ে চালানো হচ্ছে।

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহার বন্ধে জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহারের ক্ষতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করা, ওষুধ ব্যবস্থাপত্র প্রদান ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত জনবলকে প্রশিক্ষিত করা ও সর্বোপরি সরকারি নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া সংক্রমণরোধে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, দেশে তিন লাখেরও বেশি ফার্মেসী রয়েছে। এ সব ফার্মেসির অধিকাংশতেই ন্যুনতম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট নেই। তাদের সমিতির মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৮০ হাজার মানুষ তিনমাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে ফার্মেসি কাউন্সিলের ‘সি গ্রেডের’  ফার্মাসিস্টের সার্টিফিকেট পেয়েছেন।

তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রিতে রামরাজত্ব চলছে। কোয়াক ডাক্তাররা সাধারণ হাঁচিকাশিতেও উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োাটিক দিচ্ছেন।

উচ্চ ডিগ্রীধারী চিকিৎসকরাও কম যান না, দ্রুত রোগীকে সুস্থ করে তুলতে অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আইসিডিডিআরবি, বিএসএমএমইউসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায়ও দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের অকাট্য প্রমান পাওয়া গেছে।

এমইউ/একে/পিআর