ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

প্রবাসীদের মরদেহ বিনামূল্যে দেশে আনার সুবিধা পুনরায় চালুর দাবি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৮:৪৩ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০২১

বন্ডের বিপরীতে সমন্বিত বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা এক কোটি টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছে এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে প্রবাসীদের মরদেহ বিনামূল্যে বহন করার সুবিধা পুনঃপ্রবর্তন এবং লেবাননে অবৈধ হয়ে আটকেপড়া অসহায় বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে স্বল্পমূল্যে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সংগঠনটি।

বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর রেনেসাঁ ঢাকা গুলশান হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান এসব দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি থাতেইয়ামা কবির, সাধারণ সম্পাদক কাজী সারোয়ার হাবীব, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী, অর্থসম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুর রহমান প্রমূখ।

লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান বলেন, জাতীয় পতাকাবাহক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিদের মরদেহ দেশে আনতে বিনামূল্যে বহন করোনাকালের আগেই স্থগিত ঘোষণা করেছে। যা এখনও কার্যকর রয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন চালু থাকা বিনামূল্যে মরদেহ বহনের এ ব্যবস্থাটি নিম্নআয়ের অসহায় প্রবাসীদের জন্য বড় সহায়ক শক্তি ছিল। বর্তমানে সুযোগটি তুলে নেয়ায় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী ভাই-বোনের অনেক মরদেহ জমা পড়ে আছে। যেগুলো আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে দেশে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় আগের মতো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মাধ্যমে প্রবাসীর মরদেহ বিনামূল্যে বহন করার সুবিধা পুনঃপ্রবর্তনের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার আবেদন রাখছি।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ওয়েজ আর্নাস ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের বিপরীতে সমন্বিত বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা এক কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নির্ধারণ করেছে। যার ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা বন্ড বিধির আলোকে ১৯৮১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪০ বছরে বন্ডে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় থেকে বাংলাদেশে নিশ্চিত বিনিয়োগ মনে করে বন্ড ক্রয় করেন। তারা বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন না বিধায় বন্ডকে অধিকতর সুরক্ষিত বিনিয়োগ মনে করে থাকেন। সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ না থাকায়, প্রবাসীরা বৈধপথে নিজ নিজ প্রবাসে উচ্চহারে কর প্রদানের মাধ্যমে এ অর্থ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে আসছেন। প্রবাসীরাও তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আন্তরিকতার সঙ্গে দেশে বিনিয়োগ করে থাকেন।

মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান বলেন, সরকারের এসব সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকৃত অর্থ বিদেশে ফিরিয়ে নেয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। যা বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। বন্ডে বিনিয়োগকৃত মূল অর্থ যেকোনো সময় বিদেশে প্রত্যাবর্তনযোগ্য হিসেবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে। এছাড়া এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রবাসীরা যেমন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি তাদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হওয়ায় দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। এতে দেশে বৈদেশিক আয়ের প্রধান উৎস রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠানো এবং অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

তিনি আরও বলেন, বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে তা যদি বাধাপ্রাপ্ত করা হয়, তবে দেশে অবৈধপথে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং বৈদেশিক রিজার্ভের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দেখা দেবে। বৈদেশিক বিনিয়োগের হার কমে যাওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক রিজার্ভও কমে যাবে। এজন্য বন্ডের বিপরীতে সমন্বিত বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা এক কোটি টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনাপূর্বক তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার আবেদন জানাচ্ছি।

মাহতাবুর রহমান আরও বলেন, লেবাননে আনুমানিক দেড় লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার কাগজপত্রবিহীন (অবৈধ) রয়েছেন। দেশটি প্রায় দেড় বছর ধরে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার সীমাহীন দরপতন এবং সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে পড়ে বর্তমানে বৈধ বাংলাদেশিরা যেখানে দুঃসহ সময় পার করছেন, সেখানে অবৈধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশিদের অবস্থা আরও করুণ। দেশে পরিবারের জন্য টাকা পাঠানো তো দূরের কথা, প্রবাসে নিজেদের পেট চালানো দায় হয়ে পড়েছে। লেবাননে সরকারের দেয়া সাধারণ ক্ষমার সুযোগে বাংলাদেশ দূতাবাসের বিশেষ কর্মসূচির আওতায় গত ২৫ থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে কাগজপত্রবিহীন (অবৈধ) বাংলাদেশিদের নাম নিবন্ধন চললেও চার দিনে মাত্র চার হাজার বাংলাদেশি বিমান টিকিটের ৪০০ ডলারের বিনিময়ে নাম নিবন্ধন করতে সক্ষম হন। নিবন্ধনকৃতদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশ থেকে দেনা করে কিংবা ফসলি জমি বিক্রি করে টিকিটের টাকার বিনিময়ে নাম নিবন্ধন করেছেন। ধারণা করা হয়েছিল- আনুমানিক ২০ হাজার অবৈধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি নাম নিবন্ধন করবেন। কিন্তু বিমান টিকিটের ৪০০ ডলার হাতে না থাকায় বা সংগ্রহ করতে না পারায় তারা নাম নিবন্ধন করতে পারেননি। এ ব্যাপারে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক লেবাননের ভুক্তভোগী প্রবাসী বাংলাদেশিরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এমন বাস্তবতা ও মানবিক বিবেচনায় লেবাননে সাধারণ ক্ষমার আওতায় নিবন্ধিত কাগজপত্রবিহীন বা অবৈধ হয়ে যাওয়া প্রবাসীদের বিমান বাংলাদেশের বিশেষ ফ্লাইটে স্বল্পমূল্যে দেশে ফিরে আসার সুযোগ করে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।

এমইউ/এএএইচ/এমএস