যুক্তরাজ্য ফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে সাত হোটেল নির্ধারণ
যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের নিজ খরচে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের জন্য সাতটি আবাসিক হোটেল নির্ধারণ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুসারে নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ শুক্রবার (১ জানুয়ারি) থেকে যুক্তরাজ্য ফেরত যাত্রীদের কারো সঙ্গে আরটিপিসিআর ল্যাবরেটরিতে করা করোনা নেগেটিভ সনদ না থাকলেও যেতে হবে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে।
এতদিন বিদেশ ফেরত যাত্রীদের শুধুমাত্র সরকারি কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলেও শুক্রবার থেকে যাত্রীরা চাইলে সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে না গিয়ে সরকার নির্ধারিত সাতটি হোটেলের যেকোনো একটিতে নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত হোটেল সাতটি হলো- রাজধানীর বনানীর অমনি রেসিডেন্স, নিকুঞ্জ-২ এর বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস মায়া, হোটেল গ্রেস-২১, উত্তরা সেক্টর-১ এর হোটেল এফোর্ড ইন, সেক্টর-৯ এর হোয়াইট প্যালেস হোটেল, সেক্টর-৩ এর মেরিনো রয়েল হোটেল এবং মেমেন্টো হোটেল।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ এর অধিদফতর থেকে উপসচিব মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক চিঠি বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে সনাক্তকৃত নতুন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দ্রুত সংক্রমণশীল করোনাভাইরাসের স্ট্রেইন শনাক্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে সারাবিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের যোগাযোগ বিছিন্ন করা হয়। বাংলাদেশে যাতে এ ভাইরাসের সংক্রমণ না ঘটে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত অনুশাসন দেন। তার প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য ফেরত যাত্রীদের নিজ খরচে হোটেলে অবস্থানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে ওই সাতটি হোটেল নির্ধারণ করা হয়।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ‘৩১ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিট অর্থাৎ ২০২১ সালের ১ জানুয়ারির প্রথম প্রহর থেকে যেকোনো ফ্লাইটে বা অন্যকোনো বন্দর দিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের নিজ খরচে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরেক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তখন থেকেই সরকারি কোয়ারেন্টাইনে বিদেশফেরত যাত্রীদের রাখা হচ্ছে। ওই সময় থেকে এতদিন বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের দিয়াবাড়ি ও হজক্যাম্প কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হতো। শুরুর দিকে ইউরোপ থেকে আসা যাত্রীরা কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের পরিবেশ নিয়ে প্রবল আপত্তি তোলেন। ইতালি ফেরত যাত্রীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের হজ ক্যাম্পের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের পরিবেশ নিয়ে বাকবিতণ্ডাও হয়। এবারই প্রথম বিদেশ ফেরতদের হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করলো সরকার।
এদিকে, ২৯ ডিসেম্বর এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সার্কুলারে বেবিচক জানায়, প্রত্যেক যাত্রীর করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে বাংলাদেশে আসা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে আগত সব যাত্রীকে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
যুক্তরাজ্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়া, কাতার এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, এমিরেটসসহ আরও কয়েকটি এয়ারলাইন্স যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় যাত্রী নিয়ে আসে। এরমধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটেও সরাসরি যাত্রী নিয়ে যায়। তবে শাহজালাল বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের জন্য হোটেল নির্ধারণ করা হলেও অন্য দুটি বিমানবন্দরে আগতদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য হোটেল নির্ধারণ করা হয়নি।
এমইউ/ইএ/এমএস