করোনার ‘অভিশাপ’ পুড়ে আসুক ‘আলো’ হয়ে
এতো দুঃখ আগে দেখেনি পৃথিবী। করোনা বিষে বিষাক্ত গোটা দুনিয়া। হারানোর বেদনায় জর্জরিত আকাশ-বাতাস। শোক আর জরায় যে ক্ষত এঁকে গেল মানবজমিনে, তা সহজে মুছবার নয়।
জীবনের আয়োজনে যে পৃথিবীকে স্বর্গ জানে মানুষ, সেই পৃথিবীকেই নরক ঠেকল যেন। এতো নিষ্ঠুরতা পৃথিবীও প্রত্যক্ষ করেনি আগে! এক অদৃশ্য ভাইরাসে মানুষের অসহায়ত্ব যেন সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে ম্লান করে দিয়েছে রীতিমত। ম্লান করেছে বিজ্ঞানের উৎকর্ষকেও। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত অর্জন! অথচ বছর গুনেও মুক্তি মিলছে না করেনার অভিশাপ থেকে।
কারোনাকালেই মানুষের রূপ মিলছে দারুণভাবে। জীবন বাঁচার তাগিদে মানুষই মানুষ থেকে সরে গেছে যোজন যোজন দূরে। যে সমাজ ঐক্যের কথা বলে, কাছে আসার কথা বলে, সে সমাজই সামাজিক দূরত্ব বাধ্যতামূলক করে দিচ্ছে। আপন ছেড়েছে আপনকে । করোনা আক্রান্ত বলে বৃদ্ধ মাকেও জঙ্গলে ফেলে আসার বর্বরোচিত ইতিহাস তৈরি হলো এ বছর। ভাইয়ের লাশ দাফন করেনি ভাইও।
আবার ভালোবাসার দুয়ারও খুলছে করোনার এই অভিশপ্ত সময়ই। ভাইরাসের জুজুর ভয়ে সন্তান যখন বাবাকে ঘরছাড়া করেছে, ঠিক তখনই পর মানুষের বুকে ঠাঁই মিলেছে সেই দুঃখীজনের। আপন-পর, ভালো-মন্দের অজস্র নিদর্শন তৈরি হলো মহামারির এই দিনে। দুঃখবোধের অসীম সাগরে সুখের ভেলাও ভাসিয়েছে মানুষ। করোনাকালে মানুষ যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা আগে কখনো দেখা যায়নি।
দুঃখবোধের অসীম সাগরে মানুষ যখন হতাশায় নিমজ্জিত, তখন মানুষ-ই ভালোবাসার ভেলা আগলে রেখেছে। এমন ভালোবাসার কাছে হার মেনেছে পুঁজি-সম্পদের খবরদারি। মানুষের প্রতি প্রেম-ভালোবাসার খবরে সয়লাব ছিল সমস্ত দিক।
আসছে নতুন বছর। এমন ভালোবাসার গালিচাতেই ভরে যাক সমস্ত জমিন। ‘ভয়’ সে তো এক পরাজয়ের অন্ধকার সিঁড়ি! ‘শঙ্কা’ সে তো বেঁচে থাকার দুঃসহ গ্লানি। দূর হোক ভয়, চিত্তে আসুক জয়। নুতনের কেতন উড়িয়ে আসুক চেতনার ঝাণ্ডা। নবোদ্যমে প্রাণ জাগিয়ে বেজে উঠুক মানুষেরই জয়গান।
করোনার আঁধার কেটে শিগগির আলো আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যক হাসান আজিজুল হক। তিনি বলেন, যে বছর গেল, তা মানুষের প্রত্যাশিত নয়। এতো মৃত্যু! এতো জরা! সর্বত্র হাহাকার প্রত্যক্ষ করেছে মানুষ। অতিমারির আর কোনো ঘটনা সভ্যতাকে এতো বিমর্ষ করেনি। কতো আপনজনকে হারাতে হলো!
হাসান আজিজুল হক ও ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
এই সমাজচিন্তক বলেন, আসছে বছর অবশ্যই সুন্দর হয়ে আসবে এমনটি বিশ্বাস রাখতেই হয়। নইলে সামনে এগিয়ে যাবো কী করে? আঁধার মাড়িয়েই তো আলোর পথে পা বাড়াতে হয়। করোনাকালে অনেক শিক্ষাও মিলছে। যে শিক্ষা মানুষকে মানবিক করে তোলে, তাতে ভর করেই পৃথিবী সুন্দর হয়ে উঠুক।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনও সুন্দরের অপেক্ষায়। তিনি বলেন, আঁধার শেষে আলো আসবেই। অনেক কিছুই তো দুমড়ে-মুচড়ে গেল। হয়ত দ্রুততম সময়েই সব ঠিক হয়ে যাবে। আর কতো! রাজনীতি, অর্থনীতি, চিন্তায় তো দারুণভাবে ধাক্কা দিল। লাশের সারি বাড়ছে এখনো। মানুষ এই পৃথিবী দেখতে চায় না।
তিনি বলেন, মানুষের বড় ক্ষতি হচ্ছে, তার মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। অর্থনীতির ক্ষতিটাও কম নয়। অর্থনীতির বিপর্যয় একদিনে ঠিক হবে না। তবু মানুষ আশায় বাঁচে। বাঁচতে হয়। আগামীর দিন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্নে ভরিয়ে তুলুক।
এএসএস/এইচএ/এআরএ