ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

করোনার বিরুদ্ধে আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা আশাব্যঞ্জক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৬:৪৯ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২০

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আইভারমেকটিন ওষুধের কার্যকারিতা আশাব্যঞ্জক। এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গবেষণার আওতায় যেসব রোগী অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ আইভারমেকটিনের পাঁচদিনের কোর্স পেয়েছেন তাদের ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স এবং রক্তের বিভিন্ন বায়োমার্কারের উন্নতি হয়েছে।

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) আইসিডিডিআর,বি আয়োজিত এক সেমিনারে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নিশ্চিতভাবে মৃদু কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেকটিন অথবা আইভারমেকটিনের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন ব্যবহারের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বিষয়ে এক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। রাজধানীর গুলশানের রেনেসাঁ হোটেলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

আইসিডিডিআর,বি’র একটি গবেষণার আওতায় ঢাকার তিনটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৬৮ জন করোনা রোগীর মধ্যে ২২ জনকে কেবল মুখে খাওয়ার আইভারমেকটিন (১২ মিগ্রা দিনে একবার করে পাঁচদিন), ২৩ জনকে এক ডোজের আইভারমেকটিনের (১২ মিগ্রা) সঙ্গে ডক্সিসাইক্লিন (২০০ মিগ্রা ডক্সিসাইক্লিন প্রথমদিন এবং পরবর্তীতে ১০০ মিগ্রা দিনে দু’বার করে চারদিন) এবং ২৩ জনকে প্লাসিবো (ওষুধ সদৃশ বস্তু) দিয়ে চিকিৎসার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা তুলনা করে দেখেছে। গবেষণাটি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, ১৪ দিনের মাথায় পাঁচদিন ধরে কেবল আইভারমেকটিন পাওয়া রোগীদের ৭৭ শতাংশ রোগীর সার্স-কোভ-২ এর ক্লিয়ারেন্স হয়েছে অর্থাৎ আরটি-পিসিআর টেস্টে তারা কোভিড-১৯ মুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছেন। অন্যদিকে আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন পাওয়া ৬১ শতাংশ এবং প্লাসিবো পাওয়া ৩৯ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স দেখা যায়।

এছাড়া দেখা যায় যে, তৃতীয় দিনে শুধু আইভারমেকটিন পাওয়া দলে ১৮ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স হয়েছে। অন্যদিকে আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন পাওয়া ৩ শতাংশ এবং প্লাসিবো দলে ৩ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স হতে দেখা যায়। আর সপ্তম দিনে এই হার ছিল যথাক্রমে ৫০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ।

আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন এবং প্লাসিবোর চিকিৎসার তুলনায় পাঁচদিনের আইভারমেকটিন চিকিৎসায় রোগীর ক্লিনিক্যাল অবস্থার উন্নতিও ছিল সম্ভাবনাময়। যেখানে রক্তের বিভিন্ন বায়োমার্কারের উন্নতির মাধ্যমে নির্দেশিত সংক্রমণের তীব্রতার মাত্রা কমার লক্ষণ দেখা যায়। শুরু থেকে সাতদিনের মাথায় শুধুমাত্র পাঁচদিন আইভারমেকটিন প্রাপ্ত দলে অন্য দুটি দলের তুলনায় সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন (সিআরপি) ও ল্যাকটেইট ডিহাইড্রোজিনেস (এলডিএইচ) এবং ফেরিটিন লক্ষণীয়ভাবে কমতে দেখা যায়।

এদিকে, মৃদু কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক এবং এর ব্যবহার নিরাপদ বলে গবেষণায় প্রতীয়মান হয়। এই গবেষণার ফলাফলের ওপর একটি আর্টিকেল ২ ডিসেম্বর ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজেসে (আইজেআইডি) প্রকাশ করা হয়েছে।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী অনলাইনের মাধ্যমে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া আইসিডিডিআর,বি’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

আইসিডিডিআর,বি’র এন্টারিক অ্যান্ড রেসপিরেটরি ডিজিজিস’র সিনিয়র ফিজিশিয়ান সায়েন্টিস্ট এবং এই গবেষণার প্রধান গবেষক ড. ওয়াসিফ আলী খান গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘যদিও কোনো সুদৃঢ় উপসংহারে পৌঁছানোর বিবেচনায় এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম তবুও প্রাপ্তবয়স্ক কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার শুরুতে আইভারমেকটিন ব্যবহারের উপকারিতা এই গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে। পরবর্তীতে আইভারমেকটিন নিয়ে বড় ধরনের ট্রায়ালের জন্য এ গবেষণালব্ধ জ্ঞান নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এই ফলাফল কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের ব্যবহার সংক্রান্ত বিশ্বব্যাপী অন্যান্য গবেষণার ফলাফলের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে নাজমুল হাসান বলেন, ‘আইভারমেকটিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সহায়তা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এটি কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী সমাধান খুঁজে বের করার একটি প্রয়াস। এই গবেষণার সম্ভাবনাময় ফলাফলে আমরা আনন্দিত এবং এটি সত্যিকার অর্থেই কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে আরও শক্তি যোগাবে এবং অনেক অকালমৃত্যু এড়াতে সহায়তা করবে।’

ড. তাহমিদ আহমেদ এই গবেষণায় সহায়তা করার জন্য বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল এবং এতে অংশগ্রহণকারী হাসপাতাল সমূহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশসমূহে এই মহামারি মোকাবিলায় একটি সাশ্রয়ী এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদেরকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে শুধু আইভারমেকটিন ব্যবহার করে আরও বড় মাপের একটি ট্রায়াল পরিচালনা করার জন্য আমরা সহায়তা সন্ধান করছি।’

অনুষ্ঠানে সব বক্তারাই কোভিড-১৯ আক্রান্তদের রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।

জাতীয় পর্যায়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর; ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর; বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল; আইসিডিডিআর,বি; বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

এই গবেষণায় ব্যবহৃত সব ওষুধ সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।

এমইউ/এমআরআর/পিআর