মার্কেটে গেলে করোনাভাইরাসের কথা ভুলে যায় সবাই!
‘আপা, থামেন, এদিকের ফুটপাত দিয়ে সামনে এগোতে পারবেন না। মানুষের ভীড়ে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাবেন। যেতেই হলে চাঁদনি চক মার্কেটের সামনে দিয়ে বের হয়ে ওভারব্রিজে উঠে ওপারে যান।’
শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট ওভারব্রিজের অদূরে ফুটপাতের এক বিক্রেতা উচ্চস্বরে এক নারী ক্রেতাকে উদ্দেশ্য করে এ কথাগুলো বলছিলেন। তার খানিক আগেই ওই নারীর কাছে এক জোড়া জুতা বিক্রি করেছেন তিনি।
ওই নারীর নাম সুলতানা বেগম। থাকেন লালবাগ এলাকায়। ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার তিনি নিউমার্কেটে গিয়েছিলেন টুকটাক কেনাকাটা করতে।
বিক্রেতার কথা শুনে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে পেলেন লোকে লোকারণ্য তখন নিউমার্কেট এলাকা। রাস্তা, ফুটপাত, দোকান কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মিরপুর রোডেও তখন লেগে আছে মারাত্মক যানজট।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশেষজ্ঞরা জনসমাগম এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক মিটার বা তিন ফিট দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরার পরামর্শ দিলেও এসবের বালাই নেই মার্কেটগুলোতে।
একাধিক মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের ভীড়। আর এতে বিক্রেতারাও খুশি। তারা বলছেন, করোনার কারণে গত কয়েকমাস তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু ইদানিং ক্রেতাও বাড়ছে, বেচাকেনাও ধীরে ধীরে বাড়ছে।
তুমুল এই ভীড়ের মধ্য থেকেই কেউ কেউ বলাবলি করছিলেন, ‘এ দৃশ্য দেখে কেউ বলবে ঢাকা শহর করোনাভাইরাস সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভের ঝুঁকিতে আছে?’
করোনা মহামারির নিউ নরমাল লাইফ যেন ‘অ্যাবনরমাল’ লাইফে পরিণত হয়েছে।
অন্যান্য দিনের তুলনায় ছুটির দিনগুলোতে রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি থাকে অনেক বেশি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় মার্কেট ও শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাতে বেচা-কেনার পরিমাণ বাড়ে। শীত জাঁকিয়ে না বসলেও শীতবস্ত্রসহ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে ছুটির দিনে মার্কেটগুলোতে রীতিমতো ধুম পড়ে যায়।
শুক্রবার রাজধানীর হাজারীবাগের বাসিন্দা আফজাল হোসেন স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গরম কাপড় কিনেত আসেন। কিন্তু প্রচণ্ড ভীড় দেখে স্ত্রীকে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য বলছিলেন তিনি।
কিছুটা আক্ষেপ নিয়েই তাকে বলতে শোনা যায়, ‘কোথায় করোনা, অবস্থাদৃশ্যে মনে হয় যেন গোটা দেশ করোনামুক্ত হয়ে গেছে। বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে সবাই ছুটে এসেছেন। কিন্তু এমন করে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলার কারণে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। যারা বের হচ্ছেন তাদের কেউ কেউ অজান্তেই সংক্রমিত হতে পারেন।’
তবে গত কয়েকদিন যাবত করোনা সংক্রমন ও মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাওয়ার খবরে মার্কেটের অধিকাংশ বিক্রেতাকে মাস্ক পরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে।
ধানমন্ডি এলাকায় শীতের কাপড় বিক্রেতা আসাদ মিয়া বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ ইদানিং বেড়ে গেলেও মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার প্রবণতা এখনও দেখা যায়। ফলে ক্রেতা নিজেরাই নিজেদের সংক্রণের ঝুঁকি তৈরি করছে।
এমইউ/এসএস/এমএস