আকাশপথে যাত্রী বাড়ছে ভারতে
গত ২৮ অক্টোবর থেকে আবারও শুরু হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত ফ্লাইট চলাচল। ইতোমধ্যে পুরোদমে ফ্লাইট চালু করেছে দেশের এয়ারলাইন্সগুলো। প্রথম দুদিনে যাত্রীসংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও ভারতের রুটগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে।
এয়ারলাইন্সগুলো জানিয়েছে, প্রথমদিকে ভারতের ফ্লাইটগুলো প্রায় ফাঁকা থাকলেও বর্তমানে প্রতি ফ্লাইটে ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ফ্লাইটগুলো চলাচল করছে। এ সংখ্যাও প্রত্যাশা থেকে কম। যাত্রীসংখ্যা কম হওয়ার কারণ হিসেবে পর্যটন ভিসার অনুমতি না দেয়ার কথা বলছে এয়ারলাইন্সগুলো।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ভারত গেলে এখন চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যাপার রয়েছে, কোয়ারেন্টাইনের জন্য হোটেল বুকিং করতে হয়, কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেটসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। এ কারণে প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই ভারত যেতে আগ্রহী নন। শিগগিরই যাত্রী বাড়বে বলে আশা তাদের।
বাংলাদেশে বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ভারতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমান বাংলাদেশ ঢাকা থেকে কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই রুটে সপ্তাহে তিনটি করে ফ্লাইট এবং ইউএস-বাংলা ঢাকা থেকে কলকাতা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে চেন্নাই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, দিল্লি ও কলকাতা রুটে তাদের ড্যাশ-৮ মডেলের ছোট আকারের প্লেন দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমানের প্রথম ফ্লাইটে ঢাকা থেকে মোট ৩৬ জন দিল্লি গেছেন এবং সেখান থেকে ৩০ জন ঢাকায় ফিরেছেন। কলকাতা রুটের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৯ ও ৩০। অর্ধেক যাত্রী হলেও এই সংখ্যাকেও ইতিবাচক বলছে বিমান।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা-চেন্নাই-ঢাকা, চট্টগ্রাম-চেন্নাই-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সোমবার ছাড়া সপ্তাহের ছয়দিন কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে ফ্লাইট। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে সাতদিন চেন্নাইয়ে ফ্লাইট যাচ্ছে তাদের।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, কোভিড-১৯ সংকটের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইউএস-বাংলা ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে যাত্রীদের আস্থার জায়গাটাও তৈরি করতে পেরেছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটেও আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ভারতে আমরা সবগুলো শিডিউল ফ্লাইট পরিচালনা করছি। যাত্রীসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আশা করছি ১০-১২ দিনের মধ্যে আমরা আশানুরূপ যাত্রী পাব।
এদিকে অনুমতি পেলেও ভারতে এখনো ফ্লাইট শুরু করেনি নভোএয়ার। এ বিষয়ে নভোএয়ারের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার এ কে এম মাহফুজুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, নভোএয়ার ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সবধরনের অনুমতি নিয়েছে। ট্যুরিস্ট ভিসা চালু না হওয়ায় যাত্রী এখন অনেক কম। আমরা ফ্লাইট পরিচালনা করছি না। ভারত ট্যুরিস্ট ভিসা চালু করলে আমরা আবারও এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করব।
এদিকে এয়ার-বাবল চুক্তির অধীনে ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, ভিস্তারা এবং গো-এয়ার ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে। তাদের ফ্লাইটগুলোতেও যাত্রীসংখ্যা সীমিত। যাত্রীরা বিজনেস/ব্যবসায়িক ভিসা, মেডিকেল/মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট ভিসা, স্টুডেন্ট/শিক্ষার্থী ভিসা, রিসার্চ/গবেষণা, কনফারেন্স/সম্মেলন ভিসা, এমপ্লয়মেন্ট/কর্মসংস্থান ভিসা, ট্রেনিং/প্রশিক্ষণ ভিসায় দেশটিতে যেতে পারলেও কাউকে পর্যটক বা ট্যুরিস্ট ভিসা দিচ্ছে না তারা।
সব যাত্রীর জন্য যাত্রার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট নেয়া বাধ্যতামূলক করেছে ভারত। এছাড়া যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। ১৪ দিনের মধ্যে সাতদিন নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। বাকি সাতদিন যেকোনো জায়গায় বা বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
যাত্রীর করোনার লক্ষণ-উপসর্গ থাকলে তাকে কোভিড-১৯ টেস্ট করানো হবে। টেস্টের ফলাফল পজিটিভ হলে কোভিড কেয়ার সেন্টারে পাঠানো হবে। কোভিডের লক্ষণ থাকার পরও যদি টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসে তবুও যাত্রীকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ২১ থেকে ৩১ মার্চ যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ছাড়া সব দেশের সঙ্গে এবং অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এরপর আরেকটি আদেশে চীন বাদে সব দেশের সঙ্গে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এ নিষেধাজ্ঞা সরকারি সাধারণ ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে ১৪ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল, ৭ মে, ১৬ মে, ৩০ মে এবং ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ১৬ জুন থেকে প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকে লন্ডন এবং কাতার রুটে ফ্লাইট চলাচল করার অনুমতি দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য দেশের ফ্লাইটগুলো চালু করা হচ্ছে।
এআর/বিএ/পিআর