সেকেন্ড ওয়েভের আশঙ্কা থাকলেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই
রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের হিসেবে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্নের তালিকায় রয়েছে ১০টি জেলা। সর্বোচ্চ আক্রান্ত জেলা পাঁচটি হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, ফরিদপুর ও সিলেট।
এ জেলাগুলোতে আক্রান্তের হার অন্যান্য জেলার তুলনায় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। অন্যদিকে এ পাঁচটি জেলার মধ্যে রাজধানী ঢাকায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার খুবই বেশি।
ঢাকা মহানগরীতে গড়ে প্রতিদিনি এক হাজারেরও বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার পড়ে আছে চট্টগ্রাম।
অপরদিকে শেরপুর, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি ও ঝালকাঠি জেলার অবস্থান তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে ভালো। এ জেলাগুলোতে প্রতিদিন গড়ে আক্রান্তের হার মাত্র তিনজনের নিচে এবং তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী মৃত্যুহার শূন্য।
গত ২৯ অক্টোবর করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত ব্যবস্থাপনা গ্রুপের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল। সভায় করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ওয়েব (দ্বিতীয় ঢেউ) মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার প্রবণতার বিষয়টি উঠে আসে।
সভায় ২৯ অক্টোবর পূর্ববর্তী ছয়দিনের জেলাভিত্তিক করোনা পরিস্থিতির ডাটা পর্যালোচনায় জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে আলোচনা হয়। করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করতে ঢাকা মহানগর, চট্টগ্রাম, বগুড়া, ফরিদপুর, সিলেট জেলায় ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে (ডিজি) সুপারিশ করা হয়।
এছাড়া প্রতিদিনের ডাটা পর্যালোচনা পরবর্তীতে যে সকল জেলার করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে মর্মে প্রতীয়মান হবে, সে সকল জেলাতেও স্বাস্থ্য অধিদফতর তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সুপারিশ করা হয়।
দেশে গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ আক্রান্ত হয়ে প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয়।
১০ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ২০ লাখ ৬১ হাজার ৫২৮টি নমুনা পরীক্ষা করে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৭৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন সাড়ে পাঁচ হাজার রোগী।
করোনায় মোট মৃতের মধ্যে পুরুষ চার হাজার ২৩৭ জন (৭৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ) ও নারী এক হাজার ২৬৩ জন (২২ দশমিক ৯৬ শতাংশ)। করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ৯১ হাজার ৩৬৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বর্তমানে তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। আক্রান্ত রোগীর সুস্থতার হার অনেকাংশে বেড়ে গেছে।
তবে আসন্ন শীত মৌসুমে এর প্রকোপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য ও রোগতথ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা প্রতিনিয়ত মুখে মাস্ক পরিধান, নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ঘনঘন হাত ধুয়ে ফেলাসহ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা দিনকে দিন বরং কমছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সেকেন্ড ওয়েব শুরু হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার বড় খেসারত দিতে হতে পারে। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সরকারকে কঠোর হতে হবে।
এমইউ/এসআর/এমএস