রমরমা বাংলা বাজারে এখন হাহাকার
চলমান করোনাভাইরাস মহামারিতে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মতো বই ব্যবসায়ী ও বই প্রকাশকরাও চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বই নিত্যপ্রয়োজনীয় না হওয়ায় করোনার শুরুর দিকে এপ্রিল মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হয়েছে বইয়ের দোকান ও বই প্রকাশনার কার্যক্রম। ফলে সংকটে পড়েছেন বই প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত বই ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও বাঁধাই কর্মীরা।
সংকটের কারণে প্রকাশনীর কর্মচারীরা অনেকে অর্ধেক বেতন পেয়েছেন। কেউ কেউ চাকরি হারিয়েছেন। সেপ্টেম্বরে বই প্রকাশনা ও স্টেশনারি খুললেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেচাকেনা নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি না খুলে দেয়া হয়, তাহলে চরম সংকটের মধ্যে পড়বে এই প্রকাশনা শিল্প।
বুধবার (৭ অক্টোবর) বাংলা বাজার ঘুরে দেখা যায়, কিছু দোকানে দু-একজন ক্রেতার দেখা মিললেও ক্রেতাদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। তবে কওমি মাদরাসাগুলো খোলা থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রকাশনাগুলোর মোটামুটি বেচাকেনা চলছে। তবে স্কুল-কলেজের বই বিক্রেতারা অলস সময় কাটাচ্ছেন আর অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে।
বাংলা বাজারের বই প্রকাশক ও বই বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বেচাকেনার অবস্থা খুবই খারাপ। লকডাউনের পর থেকে থেকে দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। দোকান ভাড়া, ছাপখানার বিল ও কর্মচারীদের পাওনা বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে অনলাইনে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হওয়ায় কিছু বেচাকেনা হচ্ছে বলে তারা জানান।
তারা আরও জানান, সংকট নিরসনে বই পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতি থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বা প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো ভুর্তকির ব্যবস্থা করা হয়নি।
এক লাইব্রেরিয়ান বলেন, এখন অফলাইনের চেয়ে অনলাইনে বেশি বই বিক্রি হচ্ছে। লকডাউনের কারণে শিক্ষর্থীরা এখন আর সরাসরি লাইব্রেরিতে না এসে বিভিন্ন অনলাইন থেকে বই অর্ডার দিচ্ছেন। ফলে আমরা কাস্টমার পাচ্ছি না।
ইত্যাদি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী বললেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আমাদের ব্যবসায় অনেক ধস নেমেছে। গত এক মাস থেকে দোকান চালু থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ভালো কাস্টমার পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না হলে আমরা আমাদের ক্ষতিগুলো পুষিয়ে নিতে পারব না।
পাঞ্জেরী প্রকাশনীর এক সেলসম্যান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। এছাড়া একাদশ শ্রেণির ক্লাস বন্ধ থাকায় আমাদের অন্যতম আয়ের উৎস অক্ষরপত্র প্রকাশনীর বেচাকেনা ভালো চলছে না। ফলে কোম্পানি থেকে আমাদের আগের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেতন কম দেয়া হচ্ছে।
প্রতি বছরে এই মৌসুমে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হওয়ার কারণে বইয়ের দোকানগুলোতে প্রচুর বেচাকেনা হলেও এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে প্রতি মৌসুমে ক্রেতাদের যে পরিমাণ হিড়িক থাকত, এবার তা অনুপস্থিত। এই অবস্থায় বই প্রকাশকরা বাধ্য হয়েই কর্মচারী ছাঁটাই করছেন। কিছু কিছু প্রকাশক বেতন কম দিয়ে হলেও প্রকাশনার এই শিল্পকে বাচিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সবমিলিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছেন বই প্রকাশক থেকে শুরু করে বই বিক্রেতা, কর্মচারী, মুদ্রক ও বাঁধাইকর্মীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘আমরা করোনার শুরুতে সরকারের কাছে ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনা চেয়েছি কিন্ত এই অনুদান আমাদেরকে দেয়া হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের প্রকাশকদের এই অবস্থা। তবে আশা করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
রায়হান আহমেদ/এসআর/এমকেএইচ