ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

টিকায় বরাদ্দ ৬০০ কোটি, কেনা হবে না ডব্লিউএইচও’র স্বীকৃতি ছাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:৪৬ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০২০

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) স্বীকৃতি পায়নি করোনা প্রতিরোধের এমন টিকা কিনবে না সরকার। এছাড়া টিকা সংগ্রহের জন্য এক প্রকল্পের অধীনে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহের বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ তথ্য জানান।

বুধবার (৭ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয় থেকে মন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে আজ বিস্তারিত প্রেজেন্টেশন ছিল। বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনের জন্য বিভিন্ন দেশে উনারা উঠে পড়ে লেগেছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে ৪৬টি ভ্যাকসিনের আর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে ৯১টি ভ্যাকসিনের। যারা ভ্যাকসিন তৈরি করছে তাদের সঙ্গে শুরু থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যোগাযোগ রাখছে।

তিনি বলেন, ‘একটা বেইজলাইন হলো ডব্লিউএইচও যেটাকে স্বীকৃতি দেবে না সেটাকে আমরা নেব না। এটাকে বেজলাইন ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ডিপার্টমেন্ট এবং ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানিগুলো পার্সোনালি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এখানে প্রোডাকশনের জন্য।’

“এখানে যে পদক্ষেপ স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়েছে সেটা হলো গত ৪ জুন অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের উদ্যোগের লন্ডনে ‘গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিট-২০২০’ অনুষ্ঠিত হয়, এ সামিটে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন। বিশেষ করে গ্যাভির (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমুনাইজেশন) পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার যোগ্য দেশ হিসেবে ঘোষণার যে আবেদন জানানো হয় তা গ্রহণ করা হয়েছে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘চীনের বেসরকারি কোম্পানি সিনোভ্যাকের যে ভ্যাকসিন করেছে, সেটার থার্ড ট্রায়াল হিসেবে বাংলাদেশে সরকারের কাছে একটি আইসিডিডিআর’বি আবেদন জানানোর পর তা অনুমোদন করা হয়েছে। এখানে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের একটা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে। সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটু লেস প্রাইসে আমরা ভ্যাকসিন পাবো। শুধু তাই নয়, আমাদের এখানকার এক বা একাধিক ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানি ইন্ট্রোডিউস করবে।’

তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার ক্যামেলিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারের ‘স্পুটনিক-ভি’ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি বাংলাদেশে হস্তান্তরের জন্য তারা আমাদের অফার দিয়েছে। এটাও বিবেচনায় রয়েছে। এ বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। কিন্তু আমরা কন্ডিশন দিয়েছি এজন্য ডব্লিউএইচওর অ্যাপ্রুভাল লাগবে।

‘আরেকটি হচ্ছে ভারতের বায়োটেক, তারা আমাদের এখানে ট্রায়ালের আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ভ্যাকসিন কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। ৩৬ জনের প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করেছে। অনলাইনে অরিয়েন্টেশন ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।’

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ফ্রান্স ও বেলজিয়ামভিত্তিক সানোফি অ্যান্ড জিএসকে প্রোটিন বেইজ ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। দেশের দুটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি এটি প্রডিউসের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’

ভ্যাকসিন কেনার জন্য বাজেটে একটি প্রকল্পের আওতায় ৬০০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অর্থ সচিব নিশ্চিত করেছেন কোনো কারণে যদি ফরেন কারেন্সি নাও পাওয়া যায়, বাজেটের সেটা সংস্থান রাখা হয়েছে। ভ্যাকসিন কেনার টাকার কোনো সমস্যা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেয়ার সময় বলেছিলেন, করোনার ভ্যাকসিন তৈরিকারী সব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ বরাদ্দ করেছি। যেখানে ভ্যাকসিনটি প্রথম পাওয়া যাবে সেখান থেকে সংগ্রহ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার আলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুসরণ করে এযাবত গৃহীত কার্যক্রমের পাশাপাশি সম্ভাব্য সেকেন্ড ওয়েব মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।’

‘যারা ভ্যাকসিন প্রডিউস করছে আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো তাদের সঙ্গে কমার্শিয়াল সাইট নিয়ে আলোচনা করছেন। সরকার সুইটেবল মনে করলে সেটা খুব কুইকলি চলে আসবে। এটা আমাদের জন্য গুড সাইন।’

তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় আমাদের নজরে এসেছে যে, বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন পাওয়ার সুযোগ নষ্ট হয়েছে। বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন আসার ইমিডিয়েট কোনো সম্ভাবনা নেই, এটা আমাদের বুঝতে হবে। বিশ্বে একটা কম্পিটিশন চলছে। বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন পাওয়ার কোনো সুযোগ এখন নেই। যদি আসে গ্যাভির মাধ্যমে সেটাও একটু দেরি হবে।’

ভ্যাকসিন মার্কেটে আসার তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কোম্পানি বলতে পারছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যে তালিকা দেখলাম সেটা ২০২১ সালের এপ্রিল-মে-জুনের আগে মার্কেটে আসবে বলে তারা নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। যদি এর আগে সাকসেসফুল হযয় তবে ইনশাআল্লাহ সবার সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ আছে।’

‘কিছু কিছু টেকনিক্যাল সাইটও আমাদের দেখতে হচ্ছে। দু-একটা ভ্যাকসিন আছে যেটা মাইনাস ৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। এটা আমাদের দেশে খুব ডিফিকাল্ট। যেগুলো আমাদের জন্য সুইটেবল সেগুলো ২-৮ ডিগ্রির মধ্যে সংরক্ষণ করতে হয়।’

‘প্রথম থেকে ভ্যাকসিন কিনতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এবং এজন্য সাফিসিয়েন্ট বাজেট বরাদ্দ দেয়া আছে’ বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সিনোভ্যাক বিনিয়োগের কথা বলছে, সরকার বিনিয়োগ না করায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে- এ বিষয়ে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘না না, অনিশ্চয়তা কিছুই নেই। তারা বলেছে কিছু একটা ফান্ডিংয়ের জন্য। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করছি। তারা যে ফান্ডিং চাচ্ছে সেটা রেশনাল কিনা, একটা সরকারি পর্যায়ে করতে হবে নাকি বেসরকারি, কোন জায়গা থেকে করতে হবে। এগুলো নিয়ে আলোচনা করছি। ডিফিকাল্ট কিছু বলে মনে হচ্ছে না।’

ভ্যাকসিন মানুষকে বিনামূল্যে দেয়া হবে কিনা- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ভ্যাকসিনের প্রাইসটা তো এখনো ফিক্স করা যায়নি। সবকিছু দেখা যাক। সরকার সাধারণ মানুষ যারা কিনতে পারবে না সেজন্য ডেফিনেটলি একটা বড় পোরশন ফ্রি দেয়া হবে। এটা প্রাইমারি চিন্তাভাবনায় আছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’

আরএমএম/এএইচ/জেআইএম