প্রায় ১৭০০ বৃক্ষের সন্নিবেশে সজ্জিত বিচারপতি শাহাবুদ্দিন পার্ক
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন প্রকল্পের আওতায় উন্নয়নকৃত প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গুলশানের বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ পার্ক উদ্বোধন করা হয়েছে। আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন কাজ শেষে ১২ সেপ্টেম্বর পার্কটির উদ্বোধন করা হয়।
প্রকৃতিগতভাবেই এ পার্কটি বেশ সমৃদ্ধ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১৭০০ বৃক্ষের সন্নিবেশে সজ্জিত। যে কারণে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং নিজস্ব ইকোসিস্টেম অক্ষুণ্ন রেখে সজ্জিত বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ পার্কটি রাজধানীর গুলশান এলাকার ফুসফুস হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একনজরে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ পার্ক
৯ একর জমির ওপর পার্কটির উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। পার্কটির ডিজাইন করেছেন ভিত্তি স্থপতিরা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল পিএফ করপোরেশন। এটির কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ পার্কটি দূতাবাস এলাকা সংলগ্ন একটি কমিউনিটি পার্ক। এটি ‘গুলশান ট্যাংক পার্ক’ নামেও পরিচিত।
পার্কের ডিজাইনে জনসম্পৃক্ততা : পার্ক ব্যবহারকারী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করেই বয়োজ্যেষ্ঠ নালী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর সবার জন্যই বিভিন্ন বিনোদন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
হাঁটার পথ ও সাইকেল লেন : এ পার্কে পাঁচ ধরনের হাঁটার পথ রয়েছে। লাল ইটের হাঁটার পথ, কনক্রিট ব্লকের হাঁটার পথ, সবুজ ঘাসসমৃদ্ধ হাঁটার পথ, ডব্লিউ পি সি (উড প্লাস্টিক কম্পোজিট) প্ল্যাংকের পথ এবং ইলাসটো পেভের বাই সাইকেল লেনের পথ। প্রতিটি হাঁটার পথ নির্মাণে বৃক্ষরাজির সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
টয়লেট, গোসলখানা, জিমনেসিয়াম, নামাজের স্থান : পার্ক ব্যবহারকারীদের জন্য টয়লেট (মহিলা এবং পুরুষ), গোসলখানাসহ জিমনেসিয়াম, ওজুখানাসহ নামাজের স্থান, ক্যান্টিন ও ছয়টি বসার কিয়স্ক রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কর্নার : পার্কটিতে বঙ্গবন্ধু কর্নারসহ একটি লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে।
গাছপালা সমৃদ্ধ : প্রকৃতিগতভাবেই এ পার্কটি বেশ সমৃদ্ধ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১ হাজার ৭০০ বৃক্ষের সন্নিবেশে সজ্জিত।
জলাধার : তিনটি পুকুরঘাট সুবিন্যস্ত করার পাশাপাশি, জলাধারের চারপাশে তিনটি দর্শন ডেকসমৃদ্ধ একটি হাঁটার পথ নির্মাণ করা হয়েছে।
মুক্তমঞ্চ : জলাধারের উত্তর পশ্চিমের ঢালে নির্মিত একত্রে ৪০০ মানুষের বসার সুবিধাসম্বলিত ঘাসে ঢাকা সবুজ মুক্তমঞ্চ (এমপিথিয়েটার) নির্মিত হয়েছে।
মুক্তমঞ্চের সামনে জলাধারের ওপর নির্মিত পারফরম্যান্স ডেক এবং জলাধার থেকে বেরিয়ে আসা কৃত্রিম পানির ফোয়ারার জলচ্ছাটটা স্থাপন করা হয়েছে।
বাস্কেটবল গ্রাউন্ড ও ব্যাডমিন্টন কোর্ট : এছাড়া তরুণদের জন্য একটি আউটডোর বাস্কেটবল গ্রাউন্ড নির্মাণ করা হয়েছে, রয়েছে একটি ব্যাডমিন্টন কোর্টও।
জিমনেশিয়াম : ইনডোর ও আউটডোর ব্যায়ামাগার ছাড়া শিশুদের জন্য বিভিন্ন খেলার রাইডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে (ক্রয় প্রক্রিয়াধীন)।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা : পার্কটি সুন্দরভাবে ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে সিসিটিভি কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে, যেখান থেকে পার্কের প্রতিটি কর্নারে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পার্কটি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকতে পারে। এই কন্ট্রোলরুমের পাশ দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে চারতলায় উঠলেই উপর থেকে পুরো পার্কের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। এটি পার্কের ওয়াচ টাওয়ার। রাতের বেলায়ও এ পার্ক ব্যবহারের সুবিধার্থে অত্যাধুনিক এবং বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বিদ্যুৎ বাতির ব্যবস্থা রয়েছে। পার্কের অভ্যন্তরে কিছু দূর পরপরই পাওয়া যাবে ময়লা ফেলার বিন। হাঁটার সময় ক্লান্ত হলে কিছুদূর পর পর জলাধারমুখী বসার বেঞ্চও চোখে পড়বে। ব্যবহারকারীরা পানীয় জলের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পার্কের পূর্ব এবং পশ্চিম পাশে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থাও রয়েছে।
এএস/এএইচ/পিআর