করোনা চলে গেছে-এমনটি না ভাবার আহ্বান তথ্যমন্ত্রীর
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, শীতকালে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা (সেকেন্ড ওয়েভ) আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, ডিসেম্বরে করোনা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই এখনই করোনা চলে গেছে-জনগণকে এমনটি না ভাবার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে করোনা ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, মনে রাখতে হবে করোনা আছে এবং সেটা শীতকালে বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যবিধি আমাদের সবার মেনে চলা প্রয়োজন। আমরা অতীতে বা করোনার শুরুতে যেমন সতর্ক ছিলাম, এখনো একই সতর্কতা আমাদের অবলম্বন করতে হবে।
বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার আরও কম হতো যদি দেশের মানুষ ব্যাপক হারে পরীক্ষা করত বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, আমরা যদি পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই, তাহলে আমরা দেখতে পাই করোনা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আমরা অনেক দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছি। সারাবিশ্বে তিন কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৬ জন আক্রান্ত। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৭১ জনের অর্থাৎ ২ দশমিক ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ, ভারতে ১ দশমিক ৫৯, পাকিস্তানে ২ দশমিক ০৯, যুক্তরাজ্যে ১০ দশমিক ৩৬, বেলজিয়ামে ৯ দশমিক ৪৬, ফ্রান্সে ৬ দশমিক ৭১, জার্মানিতে ৩ দশমিক ৪২ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার আরও কম হতো যদি দেশের মানুষ ব্যাপক হারে পরীক্ষা করত। পরীক্ষার হার নিয়ে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশে যে পরিমাণ পরীক্ষা করা হচ্ছে সেটা জাপানের কাছাকাছি। জাপানের জনসংখ্যার অনুপাতের যে পরিমাণ পরীক্ষা হয় তার থেকে একটু কম আছে বাংলাদেশে। কিন্তু জাপানের কাছাকাছি। অর্থাৎ করোনা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আমরা অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছি।
মহামারির এই সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখে এশিয়ার প্রায় সব দেশকে পেছনে ফেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ৫ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সেটা প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, এই করোনার মধ্যে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে আমাদের রফতানির প্রবৃদ্ধি বিগত বছরের তুলনায় বেশি। করোনার মধ্যে রফতানির প্রবৃদ্ধি জুলাই মাসে গতবছরের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। এটা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও নানা ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করার কারণে। পাশাপাশি এই দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষকে সাহস দেয়ার কারণে ও সস্পৃক্ত করার জন্য। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কারণে সম্ভব হয়েছে।
‘করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রচারণা ও সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়াতে তথ্য মন্ত্রণালয় কী প্রস্তুতি নিয়েছে’-এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমরা প্রথম থেকেই কাজ করছি। করোনা পৃথিবীতে দেখার পর থেকে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে নানা প্রচার-প্রচারা চালানো হচ্ছে। সেই প্রচার শুধু সরকারি প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে করা হচ্ছে তা নয়, আমরা বেসরকারি টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকাগুলোকে আহ্বান জানিয়েছিলাম। সেক্ষেত্রে তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে সরকারের আহ্বানে সারা দিয়ে। তারা নিজেরাও অনেক প্রচার করেছে।
তিনি বলেন, ‘করোনা কখন যাবে আমরা সেটা কেউ জানি না। শীতকালে সেটি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা দেখেছি, ডিসেম্বর মাসে যখন করোনা দেখা দিয়েছিল তখন যে সমস্ত দেশে শীত ছিল বেশি, সে সকল দেশে বেশি মানুষ মারা গেছে। সুতরাং শীতকালে করোনা বাড়ার বেশি আশঙ্কা রয়েছে। যেটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলেছে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে জনগণকে ওয়াকিবহাল করেছেন। আমিও অনুরোধ জানাব, আমরা যেন এই ধারণায় না ভুগী যে, করোনা চলে গেছে। মনে রাখতে হবে, করোনা আছে এবং সেটা শীতকালে বাড়তে পারে।’
মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি আমাদের সবার মেনে চলা প্রয়োজন। আমরা অতীতে বা করোনার শুরুতে যেমন সতর্ক ছিলাম, এখনো একই সতর্কতা আমাদের অবলম্বন করতে হবে।
এমইউএইচ/এসআর/এমএস